বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া মনীষা ঘটক। এক ভাঙ্গনধরা সংসারের শেষ পাটাতন আঁকড়ে থাকা প্রচণ্ড জীবনবাদী তরুণী। ওর পরিবারে ধর্ম বদলে অন্য ধর্মের খোলসে ঢুকে যাওয়া সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এক এক করে খসে যেতে থাকে পরিবারের সব সদস্য। তারপরও জীবনের দুর্গম পদচারণা থামে না ওর। চাকরি সূত্রে পরিচয় হয় ব্রিটিশ রমণী অরলার সঙ্গে। যে আর্কটিকটার্ন পাখির মতো পৃথিবীর এক মেরু থেকে আরেক মেরুতে উড়ে বেড়ায়। মনীষার দৃঢ় মনোবলে মুগ্ধ হয় অরলা। অন্যদিকে মনীষার পিতার দয়া-দাক্ষিণ্যে তৃণমূল থেকে উঠে আসা তোরাব আলী এখন স্বীকৃত জমিনদার। জমি আর মাটির প্রতি দুর্মর মোহ তার। তোরাবের স্মৃতির জমিনে তিন ভাই- বোনের করুণ মৃত্যু এবং সাড়ে তিন হাত কবরের মাটির জন্য মায়ের আহাজারি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এখনো। বেঁচে থাকতেই তাই নিজ কবরের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে রাখে সে। বাঁধাই করা কবরের সিথানে খোদাই করা নাম লেখা, মোঃ তোরাব আলী। ঘটনাক্রমে মনীষার সঙ্গে তার দেখা। মনিব কন্যার সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটনা তোরাব আলীর বুকে অনুশোচনার গজাল মেরে দেয়। স্বস্তিকর ঘুমের মিহিন রাত ছিঁড়ে, সন্তানের অপত্য স্নেহ উপচিয়ে অপরাধ স্খলনের আকুলতা বোধ করে। তার নিজ হাতে রচিত কবর ধুম জ্যোৎস্নায় শূন্য পড়ে থাকে। এক চান্নিপসর রাতে ব্রহ্মপুত্রের প্রবল স্রোতের টানে ভেসে যায় তোরাব। ওজনসর্বস্ব শোক নিয়ে মাঝরাতে শ্মশানফেরত মনীষা যখন নদীর পাড় ঘেঁষে হাঁটে তখন ওর কাছে মনে হয়, পুরো জীবনটা এক বরফের ঘর। স্ফটিকের মতো ঝকঝকে আকর্ষণে ভরপুর, আবার ক্রমশ গলে গলে শেষ হয়ে যাওয়া অসীম শূন্যতা। শোকাচ্ছন্ন মনীষার কাছে ধবল শোকের এমন রাতকে লাগামহীন স্বাধীন মনে হয়। তাহলে কি এই ধবল শোক ওর জীবনে মুক্তির গান হয়ে এসেছে?