''রবীন্দ্রনাথের দিনরাত্রি ও ছিন্নপত্রাবলী" বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা : রবীন্দ্রনাথের 'ছিন্নপত্রাবলী' ইতোপূর্বে প্রকাশিত 'ছিন্নপত্র' গ্রন্থের পত্রাবলী সম্বলিত একটি সংকলিত গ্রন্থ। এই পত্রাবলী রবীন্দ্রনাথ তাঁর বড়ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে লেখা। ইন্দিরা দেবী বিদুষী ছিলেন। বয়সে অনেক ছোট হলেও রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিগুলো তিনি বুঝতে সক্ষম হতেন। ইন্দিরা দেবীকে উদ্দেশ্য করে এ চিঠিগুলো লেখা হলেও মূলত রবীন্দ্রনাথ নিজের জন্যেই তা লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলো অনেকাংশে ডায়েরির অভাব পূরণ করেছে, যদিও রবীন্দ্রনাথ এ চিঠিগুলোকে ডায়েরি বলতে চান নি। ছিন্নপত্রাবলীতে মোট পত্রের সংখ্যা ২৫২। এগুলোর মধ্যে শিলাইদহ থেকে ৯৩, সাজাদপুর ৪৪, পতিসর, কালীগ্রাম, নাটোর ২০। এ গ্রন্থে আরো চিঠি রয়েছে যা অন্যত্র থেকে লেখা। এগুলোর মধ্যে বোয়ালিয়া, বালিয়া, কটক, কলকাতা, বোলপুর, লণ্ডন প্রভৃতি অঞ্চল থেকে লেখা চিঠিগুলোও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা এখানে কেবল বাংলাদেশের শিলাইদহ, সাজাদপুর, পতিসর, কালীগ্রাম, কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে লেখা চিঠিগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছি। ১৯৬০ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ সাল থেকে ডিসেম্বর ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত বড় দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিসমূহ 'ছিন্নপত্রাবলী' নামে প্রকাশিত হয়। বিশ্বভারতী গ্রন্থণ বিভাগ কলকাতা কর্তৃক প্রকাশিত এই গ্রন্থে উল্লেখ করেন রবীন্দ্রগ্রন্থ পূর্বোক্ত আট বছরে যেসব চিঠি লিখেছিলেন তা এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দেখা যায়। ইন্দিরা দেবী প্রায় অধিকাংশ চিঠির সারাংশ দুটি বাঁধানো খাতায় স্বহস্তে নকল করে রবীন্দ্রনাথকে উপহার দিয়েছিলেন।
ড. আনোয়ারুল করীম ১৯৩৮ সালের ২৩ অক্টোবর, বাংলা ৮ কার্তিক ১৩৪৫ যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার লাউড়ি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস কেশবপুর উপজেলার কড়িয়াখালি গ্রামে। পিতা মরহুম মৌঃ করীম বখশ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় শিক্ষাকাল, শৈশব ও কৈশোর কাটে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। যশোর জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক, কলেজের শিক্ষা কুষ্টিয়া এবং উচ্চ শিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬২ সালে ইংরেজিতে এম.এ. এবং ১৯৭৭ সালে বাংলায় পিএইচ-ডি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনিই সর্বপ্রথম বাউল বিষয়ে পিএইচ-ডি লাভ করেন। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন ১৯৬২ সালে। ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার স্বাধীন বাংলা সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন ও সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে ভারতে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন মাস অবধি ফোকলোর ও বাউল বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে হার্ভার্ডে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে বিশ্বনন্দিত প্রফেসর এ্যানমেরি শিমেল-এর তত্ত্বাবধানে সুফি-বাউল এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণা। এ সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে Shamanism in Bangladesh Ges Divinity School-এর Center for the Study of World Religion-এ রবীন্দ্রনাথও বাংলা বিষয়ে বক্তৃতা করেন। মিনদানাও স্টেটের গভর্নর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তৃতাদানের জন্য তাকে সম্মানজনক সনদপত্র প্রদান করেন। ওই সালেই তিনি জাপানে ওকাইমা ফোকলোর সোসাইটির আমন্ত্রণে সেখানেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউল ও ফোকলোর বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাউল বিষয়ে নতুন তত্ত্ব প্রদানের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। ড. আনোয়ারুল করীম ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকারের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন। তিনি লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং ফোকলোর রিচার্স ইনস্টিটিউট, কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দীর্ঘ আট বছর আমেরিকাস্থ International Council for Traditional music-এর Liaison Officer হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অবসরে যান এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ট্রেজারার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাজ করেছেন। প্রফেসর করীম ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে নানা গবেষণা গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি বর্তমানে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ খুলনা ক্যাম্পাসের ইন-চার্জ এবং ইংরেজি বিভাগের প্রধান।