কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিক্ষণে থাকা যে মেয়েটি আদর-আহ্লাদে সচ্ছ্বল পরিবারে বেড়ে উঠে, তার নাম রঙ্গনা চৌধুরী (রঙ্গন)। শৈশব কেটেছে তার বড় দুই ভাইয়ের সাথে টেনিস, ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে আর কৈশোর কেটেছে নিজের চাইতে বয়সে বড় মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে। জীবনের কঠিন বা বাঁকা পথগুলোর সাথে তার পরিচয় হয়নি তখনও। প্রাইমারী স্কুলের পড়াশোনাটা ইংরেজি মিডিয়ামের ছোটো গ-ীতে শুরু করলেও স্কুলের বৈরি পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারায় এবং বাংলা মিডিয়ামে হাই স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ তার জীবনবোধকে বদলে দেয়। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা, শরৎ চন্দ্র আর বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাসে হাতে খড়ি হয় তখনই। শ্রীকান্তের “বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না ইহা দূরেও সরাইয়া দেয়” কিভাবে যেনো তার জীবনে ধ্রুব সত্যি হয়ে দেখা দেয়। কলেজে উঠেই প্রিয় বান্ধবীর আমেরিকায় চলে যাওয়া, বাবা-মায়ের অতি রক্ষণশীলতার কারণে বিলেতে পড়তে যাবার সুযোগ হাতছাড়া হওয়া আর ছোটোবেলার খেলার সাথীর অল্প বয়সে বিমানবালা হিসাবে চাকরীতে যোগদান অতিশয় আবেগ প্রবণ রঙ্গনকে বিদ্রোহী করে তোলে। ফলে, মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে বি.কম পরীক্ষা দেয়া রঙ্গন পরিবারের সবার অমতে চাকুরিতে ঢুকে। তারপর শুরু হয় কৈশোর- যৌবনের টানাপড়েন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, কুঁকড়ে যাওয়া রঙ্গনকে কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে পরিজনেরা কিভাবে হতাশা থেকে বের করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে এটা সেই গল্প। আমরা প্রায়শই ছোটরা ভুল করলে তাকে শাসন করি কঠিন ভাষায়। অপমান করি এমন শব্দ চয়নে যে অনেক সময়েই তা সহ্য করবার ক্ষমতা বয়ঃসন্ধিক্ষণের ছেলে মেয়েদের থাকে না, ফলে মাদকাসক্তিসহ আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটে। অথচ একটু ¯েœহ আর মমতা দিয়ে বিষয়টিকে সামাল দিলে সহজেই ভুলগুলো থেকে বের করে আনা যায় টিনএজার পরিজনকে। অপরূপা রঙ্গনের শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের বিভিন্ন স্তর আলচিত হয়েছে এই উপন্যাসে, এটা আসলে রঙ্গন নয় আমাদের সবার জীবন- চরিত্রই এটি।
১৯৬৯ সালের ৭ই ডিসেম্বর ঢাকায় জন্ম। স্কুল ম্যগাজিনের মাধ্যমে লেখালেখিতে আসা। ‘সাপ্তাহিক রোববার’-এ প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর বিভিন্ন ম্যগাজিন, অনলাইন পত্রিকায় আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লেখালেখিতে যুক্ত হন তিনি। প্রথম উপন্যাস “অপেক্ষা অযুত বছর” প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের বই মেলায় নন্দিতা প্রকাশ থেকে । বাবা প্রয়াত আমজাদ আলী আহমাদ ছিলেন প্রকৌশলী আর মা রাজিয়া আহমেদ একজন গৃহিণী। ফারিদা আহমদ নিকু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম এ করেন, তারপর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বি এ (মানব সম্পদ) এবং হিউমেন রাইটস ল’-তে মাস্টার্স করেন। বাংলাদেশ ইনসটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে পারসনেল ম্যানেজমেন্ট এ ডিপ্লোমা করেন ও সিঙ্গাপুর ইনসটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রশিক্ষণ নেন । ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী আখতার আহমেদ, ছেলে আবরার আহমেদ (কাব্য) আর মেয়ে তাঞ্জিম নাওয়ার কাঙ্ক্ষিতাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণ এস এস সি পরীক্ষার পর থেকে। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে নব্বই দশকের মাঝামঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা আর নাটকে অভিনয় করেছেন। মঞ্চ নাটক আর স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে জড়িয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে নব্বইয়ের শুরুতে। “ধুপদ নৃত্যকলা”-র ছাত্রী ছিলেন ও “বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দল” এর সদস্য হয়ে ২০১০ সালে “বেইজিং ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে” যোগ দেন। কর্মজীবনে ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর মানব সম্পদ বিভাগে কর্মরত আছেন । পছন্দ : লেখালেখি, ঘুরে বেড়ানো, সাঁতার কাটা, বই পড়া আর আড্ডা দেয়া ।