"একাত্তর করতলে ছিন্নমাথা" বইয়ের শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আমাদের কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক যখন আমাদের ইতিহাসের মহত্তম ঘটনায় শরিক থাকার। অভিজ্ঞতা বর্ণনায় অগ্রসর হন, তখন নিঃসন্দেহে। গভীরতর ব্যঞ্জনা নিয়ে ফুটে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তার দেখা। একাত্তরের ভাষ্য শুরু করেছেন নিস্পৃহ নিরাবেগ ভঙ্গিতে। বইয়ের সূচনাবাক্যে তিনি লিখেছেন : 'আমার জানা ছিল না যে পানিতে ভাসিয়ে দিলে পুরুষের লাশ চিৎ হয়ে ভাসে আর নারীর লাশ ভাসে উপুড় হয়ে।' এই জ্ঞান আমি পাই '৭১' সালের মার্চ মাসের একেবারে শেষে। জীবনের নিষ্ঠুরতার বর্ণনায় এমনি অসাধারণ সংযমী শিল্পদৃষ্টির। প্রকাশ আমাদের এক লহমায় দাড় করিয়ে দেয় কঠিন সত্যরূপের মুখােমুখি। শক্তিমান লেখকের সংহত জীবনদৃষ্টি এমনিভাবেই পরতে পরতে উদ্ভাসিত হয়েছে এই গ্রন্থে। একান্ত ব্যক্তিগত ছােট-বড় সাধারণ অভিজ্ঞতাসমূহ শিল্পের পুণ্যস্পর্শে তিনি করে তুলেছেন সর্বকালীন ও সর্বজনীন । শিল্পী অশােক কর্মকারের তুলিস্পর্শে নতুনভাবে বিন্যস্ত এই সংস্করণ পাঠকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে গ্রন্থের পাঠ আরাে নিবিড় করবার লক্ষ্য নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অজস্র বইয়ের ভিড়ে তাই উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হিসেবে অনায়াসে চিহ্নিত হবে এই গ্রন্থ।
সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় একটি নাম হাসান আজিজুল হক। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তার জন্ম । নিজের গ্রাম থেকে স্কুলের পড়া সাঙ্গ করে ওপার-বাংলায় চলে যান। তিনি, দর্শনশাস্ত্রের পড়াশোনার পর অধ্যাপনা করেন সেখানকার কয়েকটি কলেজে। ১৯৭৩ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক, এখন অবসরপ্রাপ্ত। অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘকাল অনেক গল্পের স্ৰষ্টা তিনি। গল্প অনেক লিখেছেন, কিন্তু, রহস্যময় কোনো কারণে, উপন্যাস-লেখায় বিশেষ আগ্ৰহ দেখান নি প্ৰতিভাবান এই কথাসাহিত্যিক । এ-বইটি প্ৰকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকসমাজের উৎসুক প্রতীক্ষার যেন অবসান হলো, আমাদের হাতে এসে পৌঁছল হাসান আজিজুল হকের হৃদয়স্পশী এই উপন্যাস : ’আগুনপাখি’ ।