"জীবন ও কর্ম আলী ইবনে আবি তালিব- ২য় খণ্ড" বইয়ের পিছনের কভারের কথা: রাসূল সা.-এর উত্তরাধিকার...উসমান রা.-এর হত্যাকারী এবং সুবিচার অন্বেষণ...উষ্ট্রযুদ্ধ...আহলে বাইত...খলীফা এবং ইমাম...সংযম এবং বাড়াবাড়ি...। এই কিতাব কেবল একটি জীবনীগ্রন্থ নয়; বরং এতে ইবনেআবিতালিব ইসলামের প্রথম যুগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে—যুগপরম্পরায় যার প্রভাব এখনাে বিদ্যমান। এখানে ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী হাদীস ও বিশ্বস্ত বর্ণনার সূত্র ধরে পাঠককে এমন এক ঐতিহাসিক সত্য ও নির্ভরযােগ্য তথ্যের সন্ধান দিয়েছেন যা যুগ যুগ ধরে ইসলামের শত্রুরা কলঙ্কিত করতে চেয়েছে। এখানে খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে প্রথম যে বড় ধরনের বিপর্যয় মুসলমানদের চিন্তা-চেতনা ও মুসলিমবিশ্বকে বেদনাভারে আচ্ছাদিত করে ফেলেছিল এবং তখন কীভাবে সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সা.-এর শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরে তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করেছিলেন—সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। আধুনিক মুসলমানদের অনেকে ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভােগেন। মূলত তাদের সচেষ্ট হয়ে ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস জানার এখনই শ্রেষ্ঠ সময় এবং একইসঙ্গে সাবধান থাকা উচিত, ইসলামের শত্রুরা যেন আমাদের এ ইতিহাস শেখানাের সুযােগ না পায়। ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তুলে ধরার জন্য এ কিতাবের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । ইসলামের শুরুর দিকে মুসলমানগণ যেসব বড় বড় বিপর্যয় ও ঘটনার মুখােমুখি হয়েছিলেন, তা জানার জন্য এ কিতাবটি সকলেরই অধ্যয়ন করা উচিত।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০