“রউফুর রহীম (নবিজীবনের বিশুদ্ধ ও বিস্তারিত গ্রন্থনা)-১ম খণ্ড" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ একটি জরাগ্রস্ত জনপদের আলপথ ধরে তিনি দাঁড়ালেন। জনপদটি ছিল দাঁড়াবার নিমিত্তমাত্র। পুরাে পৃথিবীই তখন পাপের সাম্রাজ্য। জগতের সর্বস্তর আর জীবনের সবখান থেকেই মুছে গেছে বেঁচে থাকবার মানে। এই নরকের পিঠে তিনি নামলেন আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ হয়ে। তাঁর চোখে ত্রিকালের মায়া, বুকে কম্প্র-দরদের টলােমল জল, মুখে আল্লাহর মােহন-মহান বাণী; তিনি স্থবির এই মানুষ-জীবনের মূলে ফুকে দিলেন জীবনের দিশা।। সূর্যের উদয় হলাে জীবনের তটরেখা ধরে। তিনি আল্লাহর নবি ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি রাহমাত সকল জগতে। হলে কী হবে—মমতায় ভরা কুসুমকুড়ানাে জীবন ছিল না তাঁর,ছিল নির্মমতায় ঘেরা। বন্ধুর পথ আর অনতিক্রম্য চড়াই পাড়ি দিতে হয়েছে, সমগ্র জীবন জুড়ে। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ছিলেন সঙ্গী, তাঁর একমাত্র রফিকে আ‘লা। এই মহামানবের অপূর্ব আনুগত্যমােড়া অভূত নবি-জীবনের গ্রন্থনা এ বই। এখানের পুরােটা জুড়েই ছড়ানাে ঘুমিয়ে-পড়া জীবনের জীয়নছোঁয়া; এখানে প্রভুর আলােতে দীপ্যমান হয়ে আছে পথ, পাথেয় ও একজন পথিক-একজন ‘রউফুর রহীম।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০