"উমার ইবন আল-খাত্তাব: জীবন ও শাসন (২য় খণ্ড)" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ইসলামের ইতিহাসে যেন রােমাঞ্চের প্রতিশব্দ ‘উমার ইবনুল-খাত্তাব। ঠিক যেদিন তরবারি হাতে হত্যা করতে এসেছিলেন নবিজিকে, সেদিনই ইসলাম বরণ করেন এই লৌহমানব। এক লহমায় ঘােরতর এই শত্রু হয়ে ওঠেন। ইসলামের অন্যতম শক্তি। নবিজির হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল যে-ইসলামি রাষ্ট্র, আবু বাকরের হাতে যে-রাষ্ট্র পার করেছে কৈশাের, ‘উমারের সময়ে সেই রাষ্ট্র পরিণত হয় পৃথিবীর প্রধান পরাশক্তিতে। ব্যক্তিত্বের মূৰ্ছনা আর নেতৃত্বের মুন্সিয়ানায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সম্প্রসার করেছেন ইসলামি রাষ্ট্রের সীমানা। তার হাতেই গড়ে ওঠে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, নানা অবকাঠামাে। বর্তমান সময়ে উম্মাহর এই টালমাটাল অবস্থায় একে সঠিক পথে টেনে তুলতে প্রয়ােজন এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব। হয়তাে তার এই জীবনীর আলােকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হবে উম্মাহ, বেরিয়ে আসবে তেমনই এক ভবিষ্যৎ নেতা! বিস্তৃত পরিসরে ইসলামি ইতিহাস সংকলনের জন্য ড. ‘আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি বর্তমান সময়ের এক প্রসিদ্ধ নাম। ইতিহাসের পাতাগুলাে পাঠকের চোখে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার কলমের ছোঁয়ায়।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০