”মুসলিম চরিত্র” বইয়ের কিছু পিছনের কভারের লেখা: দীর্ঘ সময় ধরে তামাম দুনিয়ায় তাদের ঘোড়ার খুর ছুটত। গৌরবান্বিত মুসলিম জাতির আজকের দিনে ক্রমান্বয়ে ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণিত হওয়ার অন্যতম মৌলিক কারণ নৈতিক চরিত্রের চরম অবনতি। মুসলিম জাতিসত্তার অতীত শৌর্যবীর্য ও নেতৃত্বের প্রধান হাতিয়ার ছিল এক আল্লাহতে বিশ্বাস আর দৃঢ় চারিত্রিক শক্তি। একঝাঁক নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষের চারিত্রিক ছোঁয়ায় অসভ্য পৃথিবী সভ্য হয়ে উঠেছিল; পুরো দুনিয়া তাদের বরণ করে নিয়েছিল। কালের আবর্তে পার্থিব মোহে ঢিলে হয়ে যায় এই শক্তির বাঁধন, ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে মুসলিম উম্মাহ। সেখানে জন্ম নেয় নানান চারিত্রিক রোগ-জীবাণু আর তাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে মুসলিম বিশ্ব। এক সময়ের প্রতাপশালী জাতি ক্রিড়নক হয়ে পড়ে অধঃপতিত জাতিসমূহের বাহুডোরে। বিশৃঙ্খলতার সমুদ্রের মাঝে ডুবে থাকা সত্ত্বেও আমরা অতীতের সোনালি অধ্যায় ফিরে পাওয়ার লড়াই করতে চাই। এই লড়াইয়ের মোক্ষম অস্ত্র চরিত্র। নৈতিক চরিত্রে বলিয়ান হওয়া ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো একেবারেই অসম্ভব। আমাদের চরিত্র মডেল সাইয়্যেদুল মুরসালিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবা আজমাইন। এই গ্রন্থে আমরা সুন্নাহর চোখে চরিত্র গঠনের অবকাঠামো দেখব।
(১৯১৭ -- ১৯৯৬) (আরবি: الشيخ محمد الغزالي السقا) ছিলেন একজন মুসলিম পণ্ডিত যার লেখনী মিশরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে গেছে। তিনি ৯৪ টি বই লিখেছিলেন। এই বইগুলোর মাধ্যমে আধুনিক যুগের আলোকে কুরআন ও ইসলামকে ব্যাখ্যা করার ফলে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাকে মিশরে ইসলামের নবজাগরণের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারও কারও মতে তিনি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় মুসলিম নেতা। গাজালির জন্ম ১৯১৭ সালে, বাহিরা গভর্ণরেটের আলেক্সান্ড্রিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি ছোট উপকূলবর্তী শহর নিকলা আল-ইনাবে (نكلا العنب)। তিনি ১৯৪১ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক লাভ করেন। তিনি মক্কার উম আল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলজেরিয়ার আল-আমির আবদ আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। শেখ আল-গাজালি কায়রোতে ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি ছিলেন। তিনি ষাট শতাধিক বই লিখেছিলেন, যার অধিকাংশই একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। তিনি অনেক পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রথম অর্ডার অব দ্য রিপাবলিক (মিশর) (১৯৮৮), বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার (১৯৮৯) এবং পাকিস্তান হতে এক্সিলেন্স পুরস্কার। তিনি বেগম আমিনা কুতার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র ও পাঁচ কন্যা ছিল। মৃত্যুর পর তাঁকে সৌদি আরবের মদিনায় দাফন করা হয়। তিনি মিশরের একজন বিখ্যাত শেখ ছিলেন এবং মৃত্যুর পরও জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছিলেন।