“ইসলামের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ এ গ্রন্থটি একটি শিক্ষামূলক আলােচনা ও নীতিগত নিরীক্ষণমাত্র। যা মুনাযারাহ বা বিতর্কধর্মী শৈলীতে রচনা করা হয়নি। ধর্মীয় সংবিধান বা ফাতাওয়ার ভাষায়েও তা লেখা হয়নি। গ্রন্থটি একটি আশঙ্কার বহিঃপ্রকাশ এবং আদ্যোপান্ত assJI aJi (ধর্ম হচ্ছে অন্যের কল্যাণ কামনার নাম) এর বিধান বাস্তবায়নের একটি নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টামাত্র। এর নেপথ্যে কোনাে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বা সাংগঠনিক স্বার্থও নেই।... মনােলােভা নাই হােক, কিন্তু আল্লাহ তা'আলার দরবারে জবাবদিহির ভয় ও সত্যভাষণের তাড়নায় এ কর্ম সম্পাদন করা হয়েছে। যারা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ খিদমত নিঃস্বার্থভাবে আঞ্জাম দিতে বদ্ধপরিকর; যাদের মাঝে সত্যানুসন্ধানের নিখাদ প্রয়াস এবং নিজের ধর্মীয় উন্নতি ও পূর্ণতার সুষ্ঠু উদ্দীপনা রয়েছে, তারা সর্বদা সুস্থ ও গঠনমূলক সমালােচনা এবং নিঃস্বার্থ পরামর্শের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। ইসলামকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা ও প্রয়াসের সুদীর্ঘ ইতিহাসে বারংবার দেখা গেছে, দ্বীনের বিশুদ্ধ বােধ ও বিশ্লেষণ এবং ইসলামের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের সহযােগিতা সর্বাধিক সমাদৃত হয়ে এসেছে।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।