‘মুহাম্মদ আল-ফাতিহ’ বই সম্পকিত কিছু কথাঃ তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল কনস্টান্টিনোপল। এর বিজয়ের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, মুসলিমদের। সেই সেনাবাহিনী ও সেনাপতি কতইনা উত্তম, যারা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। ফলে এই সৌভাগ্য অর্জন করার লক্ষ্যে যুগে যুগে মুসলিম সেনাপতি ও সেনাবাহিনী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ইতিহাস অপেক্ষায় ছিল সেই মহান ব্যক্তির সাক্ষাৎলাভে, যে সেই শহরের বুকে বিজয়-কেতন ওড়াবে এবং বাস্তবায়ন করবে প্রিয়নবির ভবিষ্যৎবাণী। শতাব্দির পর শতাব্দি অতিক্রান্ত হওয়ার পর অবশেষে দেখা মিলল সেই অমিততেজা বীর পুরুষের, যিনি পৃথিবীর বুকে বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। মানবেতিহাসের । যুদ্ধ-অধ্যায়ে অবিস্মরণীয় বিজয়-কৌশলের চিত্র এঁকেছিলেন। পানির জাহাজ ডাঙায় চড়িয়ে দখল করে নিয়েছিলেন রোমানদের শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কনস্টান্টিনোপল।। রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সেই মহানায়ক ছিলেন সুলতান মুহাম্মদ আল-ফাতিহ। তার জীবন-উপাখ্যান নিয়েই রচিত হয়েছে এই বইটি। সেই সাথে উসমানি খিলাফতের উত্থান ও প্রথমদিকের উসমানি খলিফাদের ধারাবাহিক পরিচিতির কিঞ্চিৎ বিশ্লেষণাত্মক বিবরণও রয়েছে। আরবের প্রখ্যাত লেখক ও ইতিহাস-গবেষক ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবির কলমে এই মহান মুজাহিদের জীবনী পড়তে আশা করি ভালো লাগবে, পাঠকহৃদয় মুগ্ধ ও আলোড়িত করবে।
Title
মুহাম্মদ আল-ফাতিহ (কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের মহানায়ক সুলতানের জীবন-উপাখ্যান)
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০