ভূমিকা: ‘আ ফ্যালকন ফ্লাইজ’এর ভূমিকা লিখতে বসেছি। আফ্রিকার পটভূমিতে উপন্যাস লিখেছেন অনেক লেখকই। তবে অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসের কথা যদি বলা যায়, তবে সবার আগে আসবে উইলবার স্মিথের। পাঠক হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের কথা ভেবে আপত্তি তুলতে পারেন অবশ্য। কিন্তু একটা জায়গায় উইলবার স্মিথ অনন্য এবং অতুলনীয়। পাঠকের মন নিয়ে তার মতো খেলতে পারেননি আর কেউই। যেকোনো লেখকেরই লেখার একটা ছক থাকে। উইলবার স্মিথেরও আছে। তার লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার চরিত্ররা কেউই শতভাগ নিখুঁত নয়, প্রত্যেকেই দোষগুণসম্পন্ন রক্তমাংসের মানুষ। পাঠক তাই ভালো এক চরিত্রকেও পুরোপুরি পছন্দ করতে পারবেন না, আবার মন্দ চরিত্রের একজনকেও পুরোপুরি অপছন্দ করতে পারবেন না। পাঠককে এই যে সিদ্ধান্তহীনতায়, দোদুল্যমানতায় ভোগানো, এটা সম্পূর্ণ উইলবার স্মিথের সম্পত্তি। তিনি ছাড়া এতটা সংশয় পাঠকের মনে আর কেউ তৈরি করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না ।
‘আ ফ্যালকন ফ্লাইজ' বইয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ পিতার খোঁজে আফ্রিকা যাচ্ছে দুই ভাইবোন রবিন আর জুগা। তাদের সাথে পরিচয় হয় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ক্লিনটন কড্রিংটনের, পরিচয় হয় আমেরিকান দাসব্যবসায়ী মাঙ্গো সেইন্ট জনের সাথেও। মূলত, এই চারজনেরই গল্প ‘আ ফ্যালকন ফ্রাইজ'। দুই খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে বইটা। অনেকেই এর কারণ জিজ্ঞেস করেছেন। পুরোটাই পাঠকদের কথা মাথায় রেখে, পাঠকদের সুবিধের জন্য দুই ভাগে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ প্রকাশকের সাথে আলোচনা করে জানতে পারি, অখণ্ড সংস্করণের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ। পাঠকদের ভালোবাসাই আমার শক্তি। ইমতিয়াজ আজাদ, ঢাকা।
উইলবার এডিসন স্মিথ, সাহিত্য জগতে উইলবার স্মিথ নামে যার ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে | উইলবার স্মিথ মূলত একজন অ্যাডভেঞ্চারধর্মী থ্রিলার লেখক। ১৯৩৩ সালের ৯ জানুয়ারি উত্তর রোডেশিয়ার ব্রোকেনহিলে জন্মগ্রহণ করেন এ লেখক। শিশুবয়স থেকে বইয়ের প্রতি যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো তার অবদান সম্পূর্ণ স্মিথের মায়ের। সেকেন্ডারি স্কুলে পড়ার সময়ে স্কুল ম্যাগাজিনের গুরুভাগ দায়িত্বই ছিলো তার কাঁধে, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু পিতার উপদেশে সে পথে আর যাননি, বেছে নিয়েছিলেন কর্পোরেট জীবন। রোডস ইউনিভারসিটি থেকে স্নাতক শেষ করে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট পদে নিযুক্ত হন। তবে স্বপ্নের কাছে শেষমেশ নতি স্বীকার করতে হয়েছিলো। ১৯৬৪ সালে ‘হোয়েন দ্য লায়ন ফিডস’ উপন্যাস প্রকাশের মাধ্যমে তার সাহিত্যজগতে প্রবেশ, কিন্তু শুরুটা তত সহজ ছিলো না। এর আগে যে পান্ডুলিপিটা তিনি প্রকাশকদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তা ২০ বার প্রত্যাখান করা হয়েছিলো। তবে প্রথম উপন্যাস প্রকাশের পর তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই বিলিয়নিয়ার লেখকের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৬টি। উইলবার স্মিথ এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য ডায়মন্ড হান্টারস’, ‘দ্য ডার্ক অফ দ্য সান’, ‘ক্রাই উলফ’, ‘ওয়াইল্ড জাস্টিস’, কোর্টনি সিরিজ, ব্যালান্টাইন সিরিজ, প্রাচীন মিশর সিরিজ। সাধারণত তার বেশিরভাগ উপন্যাসই উল্লেখিত ৩টি সিরিজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী তার বইসমূহের ১২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। উইলবার স্মিথ এর অনুবাদ বই সমূহ ২৬টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে যা ইংরেজি ভাষায় লেখা বইগুলোর মতো সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে প্রথম দুই স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হলেও তৃতীয় স্ত্রীকে তিনি ভালোবাসতেন। তবে ক্যান্সারে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। বর্তমানে চতুর্থ স্ত্রী মোখিনিসোর সাথে লন্ডনে বসবাস করছেন এই বর্ষীয়ান লেখক।