শ্মশান থেকে পোড়া মাংসপিণ্ডের গন্ধ পেরিয়ে বহু পথ দূরে আসার পরও যে দমকা হাওয়া ছুটে এলো, তার গা ভর্তি সেই পোড়া গন্ধ। আশ্চর্য হল পিয়াল। গা শিরশিরিয়ে উঠলো। কাছে পিঠে কেউ নেই। দূরে বাড়ির পরে বাড়ি আছে। বাড়ির ভেতরে কোন কোন ঘরে লোক জেগে থাকলেও এখান থেকে টের পাওয়া যাচ্ছে না। হাওয়া পিছু পিছু আসছে আর আসছে। একটা বাড়ির মধ্যে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে; পিয়াল সেদিকে পা বাড়ালো। ক্ষীণ চাঁদের আলোয় পথ-ঘাট তেমন দেখা না গেলেও যে সরু পথটি বাড়ির দিকে ঢুকেছে, তার বুকটা ধবধবে সাদা। চাঁদের ওটুকুন আলোতেও হেসে আছে চিতল মাছের শরীর যেন। বাধাহীন পথ অতিক্রম করে বাড়িতে প্রবেশ করে সে। বাড়ির সামনেই উঠোন। উঠোনের পশ্চিমে বড় একটি পুকুর, সানবাঁধানো ঘাট। পুকুরের পরিধি রাস্তা অবধি গেছে। আগেকার দিনে মানুষ বড় বড় পুকুর কেটে রাখতো কেন কে জানে। আসলে জায়গা জমির তেমন অভাব ছিল না বলেই হয়ত। মুরুব্বিরা শুধু পুকুরের তাজা মাছের লোভে পুকুর কাটার কথা যে বলে, তা শুধু অজুহাতই মনে হয় পিয়ালের। পুকুরের উত্তর দক্ষিণ পূর্বে কয়টি ঘর। সব ঘরে লোকজন আছে কি না কে জানে। তবে আলো জ্বলছে না। যে ঘরে আলো জ্বলছে সে ঘরের দিকে এগুতেই চাপা কান্নার শব্দ ভেসে এলো।