"কারাগার থেকে লেখা চিঠি" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: সপ্তম শতকের বিখ্যাত আলেম ইবনে তাইমিয়া রহ. তার সংগ্রামী জীবনে বেশ কয়েকবার কারবরণ করেছেন। কিন্তু তিনি ইলম চর্চা ও দাওয়াতি কার্যক্রম থেকে হাত গুটিয়ে রাখেন নি। কারাগার থেকে লিখে পাঠিয়েছেন দিকদর্শী অনেকগুলো পত্র ও নির্দেশনামা। তার দশটি চিঠির সংকলন ‘কারাগার থেকে লেখা চিঠি’। এগুলো শুধু চিঠি নয়, যেন একেকটি ভাষণ কিংবা ইলমের নির্যাস নিংড়ানো হৃদয় উজাড় করা আহ্বান। কখনও মায়ের কাছে করেছেন বন্দি থাকার কারণে তার খেদমতে অনুপস্থিতির ওজরখাহি, কখনও শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন ইলম ও আমলের তরবিয়ত, কখনও অনুসারীদের দিয়েছেন শত্রু ও বন্ধুদের সঙ্গে আচরণের নির্দেশনা। যারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে জিন্দানখানায় পাঠিয়েছে, তাদের প্রতি তার হৃদ্যতাও ঠিকরে পড়েছে পত্রাবলিতে। শাসক ও শাসিত সবাইকে সামনে রেখে তিনি কুরআন ও হাদিসের পাঠ ও ব্যাখ্যা ধরে ধরে দেখিয়েছেন, কোন ভুলগুলো তাদের বিপথে নিয়ে যাবে, কোন পথ তাদের জন্য বয়ে আনবে কল্যাণ। তাই এগুলো কেবল চিঠি নয়, একেকটি যেন দীনের পথের একেকটি রোডম্যাপ। পড়ুন এবং অবগাহন করুণ একজন সত্যিকার মনীষীর মানবের প্রতি দরদের অজস্র ধারায়।
ইবন তাইমিয়া ছিলেন মধ্যযুগের একজন বিশিষ্ট হাম্বলী ফকিহ, মুহাদ্দিস, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। তাঁর পুরো নাম তকিউদ্দিন আবুল আব্বাস আহমদ ইবন আব্দুল হালিম ইবন মাজদুদ্দিন আব্দুস সালাম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আবুল কাসিম আল খিদর ইবন মুহাম্মদ ইবন আল খিদর ইবন আলি ইবন আব্দুল্লাহ ইবন তাইমিয়া আন নুমায়রী আল হাররানি আদ দিমাশকি।তিনি দামেস্কের নিকটবর্তী হাররান শহরে সোমবার ১০ রবিউল আউয়াল ৬৬১ হি:/ ২৩ জানুয়ারি, ১২৬৩ খ্রি. ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যবাহী এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা মাজদুদ্দীন আব্দুস সালাম ও বাবা শিহাবুদ্দীন আব্দুল হালিম উভয়েই হাম্বলী মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ একজন বিশিষ্ট বুযুর্গ ও যাহিদ ছিলেন। ইবন খাল্লিকানের মতে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আবদাল ও যাহিদদের অন্যতম। ইমাম যাহাবির মতে, তিনি পরিণত বয়সে আসার আগেই ফাতওয়া দান, ধর্মীয় বিতর্ক ইত্যাদিতে অসাধারণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। ইবন কাসিরের মতে তিনি সতেরো বছর বয়সে গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন।