"মুখবন্ধ": بسم الله الرحمن الرحيم ‘আইনের শাসন’ আজ বিশ্বব্যাপী পরম কাক্ষিত। সুবিচার বর্তমানে মানবজাতির প্রধান কাম্য বিষয়। আইনের শাসন-এর অর্থ আইন থাকবে সবার উধ্বে। আইন চলবে তার নিজস্ব গতিতে। আইনের চোখে ছোট বড় সবাই থাকবে সমান। ক্ষমতা, আভিজাত্য, অর্থ বা অন্য কিছুর প্রভাব আইনের গতি রোধ করবে না। সুবিচার-এর অর্থ হলো, দুর্বলতম ব্যক্তির অধিকার পাইয়ে দেয়ার দায় কাঁধে নেয়া এবং সবলের অন্যায় প্রতিহত করা। জুলুম ও অপরাধ দমন করা, সাধারণ নাগরিকের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পৃর্ক স্বচ্চ থাকা। সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য কেবল বিচার ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। শুধু আইন, আইনের শাসন নিশ্চিত করে না। আইন ও বিচার থাকলেও অনেক সময় দেখা যায় সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা, সুনীতি ও সদ্ভাবের বিকাশ সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে আইন ও বিচারব্যবস্থা একটি জরুরি ব্যবস্থাপত্র মাত্র। মূল কাজটি হচ্ছে, সকল নাগরিকের মাঝে আইন মানার মানসিকতা তৈরি করা। ন্যায়পরায়ণতা, দেশপ্রেম, শান্তিপ্রিয়তা, মানবিক চেতনা ও বিবেচনাবোধ ইত্যাদি মানুষকে সৎ থাকতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হচ্ছে ধর্মীয় বিশ্বাস। এ বিশ্বাসই মানুষকে খোদাভীতির মাধ্যমে নিজকে নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিয়ে থাকে এবং আখেরাতে জবাবদিহিতার চিন্তা একজন মানুষের মধ্যে মজবুত দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও আরো অনেক প্রেরণাদায়ী বিষয়ও মানুষের বিবেচনার ক্ষেত্রে নৈতিকতার শক্ত ভিত গড়ে দিতে পারে। তখনই কেবল এ মানুষটি থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। বিচার ও শাসনকার্যেও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার জন্য নৈতিকতার প্রেরণা অপরিহার্য। বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার’ গণমানুষের মধ্যে এই নৈতিক প্রেরণা জাগ্রত করার জন্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি নৈতিকতা ভিত্তিক আইন (Law Based on Moral Values)। গণমানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত হলে তারা আইন মানার জন্যে প্রস্তুত থাকে। ফলে আইনের প্রয়োগ সহজ হয়। স্বপ্রবৃত্ত হয়ে মানুষ আইন পালন করে এবং অন্যকেও আইন মানতে উজ্জীবিত করে। আইনভঙ্গের প্রবণতা নিম্নতম মাত্রায় চলে আসে। ..... পারায় মহান আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি। এটিতে ২৯টি ভুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাভাষায় দালিলিক প্রমাণসহ ইসলামী আইন বিষয়ক প্রকাশনা অপ্রতুল। যেগুলো আছে সেগুলোর অধিকাংশই ফিকহের পাঠ্য গ্রন্থাদির অনুবাদ। সেগুলো সাধারণ পাঠকের জন্য সহজবোধ্যও নয়। এ পুস্তকটিতে অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায় ও বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রত্যেকটি বিষয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ এবং প্রসিদ্ধ মাযহাবগুলোর বক্তব্য দলিল-প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে সম্মানিত পাঠকগণ এখানে সব মাযহাবের ভাষ্য একসাথে পাবেন। ইসলামী শিক্ষা ও জ্ঞানের জগতে ‘আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ' যেমন অনন্য অর্জন, এর বাংলা ভাষ্য ইসলামী ফিক্হ বিশ্বকোষ’ও বাংলা সাহিত্যে এক অসাধারণ ও অপূর্ব সংযোজন। আমাদের জ্ঞানসাধনার জগৎ এ ধরনের অনবদ্য অবদানে ঋদ্ধ হোক। আলোক অন্বেষী শিক্ষিত প্রজন্ম খুঁজে পাক সাফল্যের ঠিকানা। ইসলামের কল্যাণময় জীবনব্যবস্থার দিক-দর্শন আধুনিক সমাজে প্রচারের কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের পথে সাফল্যের শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করুক- গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকাশনার শুভ মুহূর্তে মহান রাব্বল আলামীনের দরবারে এই আমাদের প্রার্থনা। উল্লেখ্য যে, আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাতে কেবল প্রাচীন ফিকহবিদদের মতামত বিবৃত হয়েছে। বিশেষভাবে আধুনিককালের যারা ফিকহের ক্ষেত্রে কাজ করেছেন যেমন মুহাম্মদ আল-গাজালী, ড. ইউসুফ আল-কারযাভী, ড. ওহাবাহ আয-যুহাইলী, ড. আবু যাহরা, আব্দুল্লাহ বিন বায, মুহাম্মদ বিন সালেহ আলউসাইমীন, বিচারপতি তাকী উসমানী, মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমী, হাসান তুরাবী প্রমুখের ফিকহী মতামত তাদের ফতোয়ার গ্রন্থসমূহে পাওয়া যাবে। সম্পাদনা পরিষদের পক্ষে শহীদুল ইসলাম। সদস্য সচিব আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ অনুবাদ ও সম্পাদনা প্রকল্প ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার