"হাইজেনবার্গের গল্প" প্রচ্ছদ কাহিনী: ১৯৩৯ সালে শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পাশে যুক্তরাষ্ট্র তার বিখ্যাত “Manhattan Project” শুরু করে যেখানে রবার্ট অপেনহাইমার সাহেবের নেতৃত্বে প্রথম মার্কিন পারমাণবিক বোমা তৈরির গবেষণা চলছিলো। যুদ্ধে টিকে থাকতে হলো হিটলারকেও বানাতে হবে জার্মান এটম বোম! কিন্তু, কে বানাবে এই মারণাস্ত্র? হিটলার কড়া নাড়লেন হাইজেনবার্গের দরজায়। গত চার দশক ধরে যেই নামকড়া জার্মান বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে দিন-রাত এক করে ফেলেছিলেন তারাই এবার শুরু করলেন জার্মান নিউক্লিয়ার রিসার্চ টীম — ইউরেনিয়াম ক্লাব। হাইজেনবার্গ হিটলারের শত্রু থেকে পরিণত হলেন মিত্রে। ভূমিকা: লেখা-লেখির অভ্যাসটা বেশ অনেকদিন ধরেই আমার উপর চেপে বসেছে। আমি বিজ্ঞানের মানুষ; আমার বসবাস ল্যাবরেটরীর সাদা আলোর নীচে। সেই জীবনটা বেশ কঠিন পরিশ্রমের; প্রায়শই রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে শরীরটার উপর। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণত আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারের একটা কফিশপে ঢুকে পড়ি। গরম ধোঁয়া তোলা তিতা স্বাদের কালো বর্ণের তরলে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপটা বের করে আরম্ভ করি লেখা-লেখি। বেশির ভাগ সময়ে সেই গল্পগুলোতেও চলে আসে আমার ল্যাবের বিজ্ঞান। ২০১৭ সালের শুরু দিকে আমার আদরের ছোট ভাই ফাহমিদের সফটওয়ার ফার্ম (batttery low interactive) আমার নামে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট বানিয়ে দেয়। www.shamirmontazid.com । নিজের লেখা বিজ্ঞান আর ভ্রমণ বিষয়ক গল্পগুলো একটু একটু করে প্রকাশ করতে থাকি ফেইসবুকে। এই সাইটটায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার-পাঁচ হাজার মানুষ আমার লেখা পড়তে আসে। আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। ফেইসবুকের জঞ্জালে কেটী পেরী এবং ক্যাট ভিডিও বাদ দিয়ে আমার বিশাল বিশাল ঘুমপাড়ানী বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা প্রবন্ধ পড়তে মানুষ কেন আগ্রহী হবে? কিছু মানুষের কাছে আমি সরাসরি কারণটা জানতে চাইলাম। ১০ মিনিট স্কুলের আদরের সহকর্মী অভীপ্সু (IBA, JU) বলেছিলো, “ভাইয়া, আমি ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র কিন্তু বিজ্ঞানকে ভালোবাসি। কঠিন রিসার্চ পেপার পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু, যতবারই আপনার লেখা সায়েন্স আর্টিকেল পড়েছি ততবারই বিজ্ঞানে একটু বেশী আকৃষ্ট হয়েছি।” অভিপ্সুর কথাটা বেশ মনে ধরলো। বিজ্ঞান তো কেবল যারা সায়েন্স বিভাগে পড়ে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমার ল্যাবের বিজ্ঞানটা সবার। এর আবিষ্কারের আনন্দটাও তাই সবাই সমানভাবে উদযাপন করবে। অক্সফোর্ডের বন্ধু আনিসুল করিম সবসময় আমার গল্প বলার ক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে থাকে। তাই, শেষ মেষ ঠিক করে ফেললাম যে, একটা বিজ্ঞান বিষয়ক গল্পের বই লিখবো যা বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও সবাই পড়তে পারবে। ব্লগ থেকে বই লেখার পেছনের মূল কৃতিত্বটা অধ্যয়ন প্রকাশনীর তাসনোভা আপুর। তার সাথে প্রথম মিটিং-এর পর আমি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে পিএইচডি করতে চলে আসি। ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তিনি দিনের পর দিন আমাকে পান্ডুলিপি পাঠানোর জন্য তাগিদ দিতেন। এই শনিবার, আগামী রবিবার করে করে দুই মাস পর আমি তাকে ব্লগ সাইট থেকে পূর্ব প্রকাশিত ১৫ টি গল্প-প্রবন্ধ একসাথে করে পাঠাই। উনি বললেন, এগুলো নাকি বই হিসেবে পড়তেও ভালো লাগবে। যেহেতু প্রকাশক মানুষ বলেছেন, সেহেতু আশায় বুক বাধঁলাম। যেই মানুষটা গত দেড় বছরে মাত্র ১৫টা বিজ্ঞান বিষয়ক ব্লগ লিখেছে সেই মানুষটাই মাত্র একমাসে আরো নতুন ১০টা গল্প লিখতে মনস্থির করলো। আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অ্যামস্টারড্যামের এক কফিশপে বসে শেষ গল্পটা লিখে ফেললাম। পূর্বপ্রকাশিত ১৫টি এবং নতুন লেখা ১০টি গল্পসহ মোট ২৫টি কাহিনী থাকছে “হাইজেনবার্গের গল্পে”। এই বইটির নাম আমি প্রথম দিতে চেয়েছিলাম “হাইজেনবার্গের প্রলাপ”। ১০ মিনিট স্কুলের কেমিস্ট্রি শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্ররা হাইজেনবার্গ নামটা বেশ পছন্দ করেছিলো। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ সাহেব আমার সবচেয়ে পছন্দের বিজ্ঞানী। তাই বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু করার সময় হাইজেনবার্গ নামটাই আমি বেশী ব্যবহার করি। এই বইয়ের সবগুলো আর্টিকেলকে গল্প বলা যাবে না। কিছু কিছু অংশ আমার মতামত কলুষিত প্রবন্ধ। কয়েকটি অংশে রয়েছে কিছু মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট, কয়েকজন বিজ্ঞানীর জীবনকাহিনী; তবে বেশীর ভাগই সত্যিকার ঘটনা যা আমার মতো বিজ্ঞানপাগল মানুষেরা পড়ে প্রতিনিয়ত রোমাঞ্চিত হয়। তাই গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস কোন ক্যাটাগরীতে বইটা যাবে তা আমি নির্ধারণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। আমি সাহিত্যিক নই, বিজ্ঞানী। সাহিত্যের ব্যাকরণ বিচারে হয়তো এই বইটা ডাস্টবিনের নিচের দিকে অবস্থান লাভ করবে। তবে আমার লেখা গল্পগুলো যদি এক-দুইটা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে তাহলে আমার এই বই লেখার উদ্দেশ্য সার্থক হবে। এই বইটা আমি বিশ্বের বেশ কিছু শহরের কফিশপে বসে লিখেছি। ঢাকার নর্থ এন্ড, অক্সফোর্ডের কস্তা কফি, এডিনবরার এলিফেন্ট হাউস, মক্কার স্টার বাকস, থিম্পুর কফি কালচার, অ্যামস্টারডামের ভাস্কোবেলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে শুধুমাত্র এককাপ কফি খেয়ে ফ্রি ওয়াইফাই কাজে লাগিয়ে এই বইয়ের অধিকাংশ গল্প লেখা হয়েছে। এই প্রতিটি কফিশপের প্রতি তাই আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। আরো কৃতজ্ঞতা আমার বন্ধু শুভ, স্বর্ণা, শামস, আয়মান, অমিতা, ইফতি, বাঁধন, অভিষেক আর ওমরের প্রতি যারা প্রতিনিয়ত আমার জীবনটা উপভোগের সঙ্গী হয়েছে। হাইজেনবার্গের গল্পের এখানেই শেষ নয়। বিশ্বের প্রতিটা কোণার কফিশপে বসে আরো গল্প লিখবো। সেগুলো প্রকাশিত হবে আগামী বছরগুলোতে। আশা করি বিজ্ঞানের জগতে আপনার পরিভ্রমণ সুখকর হোক। জয়, বিজ্ঞানের জয়! "হাইজেনবার্গের গল্প" সূচিপত্র বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে? /১৫ পৃথিবীর প্রথম ভ্যাকসিন /২১ ব্লু ম্যাজিক পিল /২৪ পাস্তুরাইজেশন /২৭ থ্যালিডোমাইড কেলেংকারি /৩০ জঙ্গীবাদের পেছনে আছে DNA /৩৩ একজন বিজ্ঞানী এবং ইসরাঈল /৩৫ স্পার্ম তিমির তেলের গল্প /৩৭ নিষ্পাপ ফাঁসির আসামী /৩৯ মশা ও HIV Virus /৪১ মা যখন খুনী (নয়) /৪৩ ভুল যখন ভালো /৪৪ নীরব ঘাতক /৪৭ ডিম সমাচার /৪৯ যুদ্ধাস্ত্র থেকে মাইক্রোওভেন /৫১ উটপাখির যত দোষ /৫৩ ২০০ বছর পর পিতা-পুত্রের পরিচয় /৫৬ ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় /৫৮ ভ্রূণের মহাবিশ্ব /৬৩ কাইমেরিক মা /৬৫ মহাশূণ্যে বারো মাস /৬৭ বিবর্তনের রূপকথা /৭০ রোগ যখন জীবন বাচাঁয় /৭৬ অ্যালান টিউরিং /৭৮ হাইজেনবার্গ /৮৩
"গণিত করব জয়" বইটির ভূমিকাঃ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ তাদের শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকেই শিক্ষক কিংবা অভিভাবকের কাছ থেকে জানতে পারে যে অঙ্কে তার মাথা ভালো নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তারা প্রথম এই কথাটি শোনে, তারপর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই একই কথা আরো অনেকবার শোনে। তাদের কেউ কেউ নিজেরা অঙ্কে (গণিতে) ভালো হওয়ার চেষ্টা করে, পরিশ্রম করে পরীক্ষার হলে যায়, এবং তারপর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে না। একসময় শিক্ষার্থীরা আসলেই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, “আমি গণিতে দুর্বল”।
এই গণিতে দুর্বলতার বিষয়টি আমাদের শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসে অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। যখনই যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগের বিষয় আসে, যখনই গাণিতিক বিশ্লেষণের বিষয় আসে, তখনই তারা ধরে নেয় যে, সেই জিনিসটি তাদের দিয়ে হবে না। তাই তো আমরা হরহামেশাই এমন প্রশ্ন পাই, “ভাই, আমার প্রোগ্রামিং শেখার অনেক ইচ্ছা। কিন্তু আমি তো গণিতে দুর্বল। আমি কি প্রোগ্রামিং শিখতে পারব?”। কেবল প্রোগ্রামিং নয়, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে জাতি হিসেবে আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গণিতে দুর্বলতা কিংবা দক্ষতার অভাব।
গণিতে দক্ষতা অর্জন করতে তিনটি জিনিস প্রয়োজন। সেগুলো হচ্ছে পড়া, উপলব্ধি করা ও অনুশীলন করা। গণিত বইতে কেবল অনুশীলনীর প্রশ্নগুলোর উত্তর বা সমাধান করলেই হবে না, বরং বই ভালোভাবে পড়তে হবে। আর পড়ার সময় গল্পের বই কিংবা খবরের কাগজ পড়ার মতো পড়লে হবে না, পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী পড়ছি, সেটি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। তো আমাদের স্কুলের গণিত বইগুলোতে অনুশীলনী আছে, অনুশীলনীর আগে আলোচনাও আছে (যদিও অনেক শিক্ষার্থীই সেই আলোচনা পড়ে না)। যেই জিনিসটি দরকার, সেটি হচ্ছে সবকিছুকে একই সুতোয় গাঁথা। গণিতের কোন জিনিসটি কেন শিখছি, সেটি কী কাজে লাগছে-এই বিষয়টি উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
এই বইয়ের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি যেন শিক্ষার্থীরা গণিতের মৌলিক ধারণাগুলো উপলব্ধি করতে পারে। সংখ্যা কীভাবে এল, মানুষ কীভাবে গুণতে শিখলো, সেই আলোচনা থেকে শুরু করে আমরা বীজগণিতের ধারণা, ঐকিক নিয়ম, উৎপাদক ও মৌলিক সংখ্যা, পরিসংখ্যান, সম্ভাব্যতা, সেট, ফাংশন, লগারিদম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কোথাও সংক্ষিপ্ত, আর কোথাও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা কিন্তু বইতে গণিত শেখানোর চেষ্টা করি নি। তাই এই বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা পড়ার পরে শিক্ষার্থীদের উচিত হবে স্কুলের গণিত বইগুলো পড়া এবং অনুশীলন করা। তাহলে এই বই পড়ে কী লাভ হবে? এই বইটি পড়ার পরে স্কুলের গণিত বইগুলো আর রহস্যময় কিংবা দূর্বোধ্য মনে হবে না। বরং তখন শিক্ষার্থীরা জানবে তারা কোন জিনিসটি কেন শিখছে এবং শেখার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে। আর বইতে গণিতের কঠিন বাংলা শব্দগুলোকে সহজ ভাষায় পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি-তাই সেই বাংলা শব্দগুলো গণিত শেখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
আমাদের দুজনের কেউই গণিতবিদ কিংবা গণিত বিশেষজ্ঞ নই-আমাদের লেখাপড়ার বিষয় কম্পিউটার বিজ্ঞান। যেহেতু বাংলাদেশে প্রোগ্রামিংকে জনপ্রিয় করার পেছনে আমরা কাজ করছি, তাই বইতে কয়েক জায়গায় সি কিংবা পাইথন ভাষায় কিছু প্রোগ্রামও লিখে দিয়েছি, যেন শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিংয়েও কিছুটা উৎসাহ পায়। তবে বইটি পড়ার জন্য প্রোগ্রামিং জানার কোনো প্রয়োজন নেই। যারা ইতিমধ্যে প্রোগ্রামিং কিছুটা শিখেছে, তারা সেই প্রোগ্রামগুলো দেখতে পারে, বাকিরা না দেখলেও চলবে।
বইটি পড়ে শিক্ষার্থীরা যদি গণিতে আনন্দ খুঁজে পায়, যদি তাদের গণিতভীতি দূর হয়, যদি তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গণিত শেখার চেষ্টা করে, তাতেই আমাদের আনন্দ ও তুষ্টি। শিক্ষার্থীদের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা রইল।
সূচীপত্র ভূমিকা লেখক পরিচিতি অধ্যায় ১ : সংখ্যা ও গণনা • পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সংখ্যা আর বড় সংখ্যা • সংখ্যারেখা • জোড় ও বিজোড় সংখ্যা • গাণিতিক অপারেশন o যোগ o বিপরীত সংখ্যা o বিয়োগ o গুণ o ভাগ o ভগ্নাংশের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ o উলটো সংখ্যা
অধ্যায় ২ : বীজগণিতের প্রাথমিক ধারণা অধ্যায় ৩ : ঐকিক নিয়ম অধ্যায় ৪ : উৎপাদক ও মৌলিক সংখ্যা • মৌলিক সংখ্যা
অধ্যায় ৫ : গসাগু ও লসাগু • গসাগু • লসাগু
অধ্যায় ৬ : শতকরা • পার্সেন্টাইল
অধ্যায় ৭ : গড়, মধ্যক ও প্রচুরক • গড় • মধ্যক • প্রচুরক
অধ্যায় ৮ : সম্ভাব্যতা
অধ্যায় ৯ : সেট • সেটের বিভিন্ন চিহ্ন :
অধ্যায় ১০ : লেখচিত্র অধ্যায় ১১ : ফাংশন অধ্যায় ১২ : লগারিদম অধ্যায় ১৩ : গণিত শেখার শুরু ‘গণিত করব জয়’ বইয়ের সারাংশঃ গণিত করব জয় বইটি লেখেছেন তামিম শাহরিয়ার সুবিন এবং তাহমিদ রাফি। তামিম শাহরিয়ার সুবিন এর জন্ম ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর ময়মনসিংহে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তিনি এসিএম আইসিপিসি ঢাকা রিজিওনাল-এর বিচারক ছিলেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড ও দ্বিমিক কম্পিউটিং। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে একজন একাডেমিক কাউন্সিলর। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে গ্র্যাব নামক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। তাহমিদ রাফি-এর জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকা জেলায়। ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ২০০৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ৪৬-তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশনগ্রহণকারী প্রথম বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। গণিত শব্দটা এসেছে গণনা থেকে এবং গণনা করার শাস্ত্রই হচ্ছে গনিত। আর এর জন্য যে টুল ব্যবহার করি তা হচ্ছে সংখ্যা। এই সংখ্যা যেমন ০,১,২,৩.৪,৫...৯ পর্যন্ত সংখ্যা গুলোকে অঙ্ক বা ইংরেজিতে ডিজিট বলে। এই সংখ্যা এলো, হাজার হাজার বছর আগে যখন মানুষ পশুপালন শুরু করল তখন প্রয়োজন দেখা দিল সংখ্যার। তখন কিন্তু ০,১,২,৩,... এ রকম লেখা হত না তখন পাথরের গায়ে বা মাটিতে দাগ কেটে এই গণনা করা হত। ০,১,২,৩... এগুলো কিন্তু একদিনে তৈরি হয় নি বিভিন্ন সময়-এর প্রয়োজনে এগুলো তৈরি হয়েছে এবং ০ (শূন্য) এর প্রথম তৈরি এবং ব্যবহার হয় ভারতবর্ষে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সংখ্যা আর বড় সংখ্যা বলে কিছু বলার উপায় নেই। এবং সংখ্যারেখা হচ্ছে সেই রেখা, যার ওপর পৃতিবীর সমস্ত সংখ্যা আছে। এবং এই রেখার একদম মাঝখানে সংখ্যাটি হচ্ছে ০। ০ (শূন্য কিন্তু একটি জোড় সংখ্যা এবং এর ২ ঘর করে সামনে বা পিছে যেতে থাকলে যত সংখ্যা পাওয়া যাবে তারা সবাই কিন্তু জোড় সংখ্যা আর বাকি সব বেজোড় সংখ্যা। এই ভাবে গণিতিক অপারেশন, যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ, বীজগনিত, ফাংশন এইগুলো খুব সুন্দর করে এই বইতে পর পর দেওয়া আছে।
'বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা' বইয়ের সামারি বিজ্ঞানীদের জীবনী বা কাহিনী মানেই তাদের জন্মসাল, মৃত্যু, কি কি করেছেন কোথায় পড়েছে এমন গৎবাদা সব তথ্য। সেখানে এই বইটি সত্যি খুবই আলাদা। বইটিতে ১৮ জন বিজ্ঞানীর মজার মজার ঘটনা উঠে এসেছে। যে সকল শিশু কিশোরদের মধ্যে আবিষ্কারের তীব্র নেশা আছে তা হাউমাউ করে গিলতে পারে বইটি। কিছু চেনা গল্প কিন্তু কিছু গল্প সত্যি একদম নতুন। বোস স্যারের ভুল, আপেল বালকের মন্দ ভাগ্য, খাদ্যরসিক প্রকৌশলীর আগুনহীন চুলা এমন সব মজার নামকরণে লেখা বইটি। খুব ছোট ছোট তথ্য থেকে না চিন্তা থেকে যে কি বড় আবিষ্কার হইতে পারে সেটা এই বই না পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন। বইটিতে আরো একটু বইয়ের রেফারেন্স নেয়া হয়েছে আমাদের সবার প্রিয় আবদুল্লাহ আল মুতীর "আবিষ্কারের নেশায়" বইটিকে। সত্যি আপনি এই বইটি পড়লে আবিষ্কারের নেশায় ডুবে যাবেন।
'বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা' বইয়ের পরিচিতি বিজ্ঞানীদের জীবনীর কথা শুনলেই মনে হয় খটোমটো কিছু একটা, চোখে মোটা চশমাওয়ালা খুব প্রচণ্ড পড়ুয়া কারও কাহিনি, সারা জীবন ধরে যে বইয়ে নাক গুঁজে কাটিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের জীবনটা আসলে মোটেও সে রকম নয়, বরং বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবনে অসাধারণ, মজার, অভাবনীয় সব ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যাপারটা লেখক শৈশবেই জানতে পারেন। এই ঘটনাগুলোর কথা লেখক ভুলতেই বসেছিলেন প্রায়, কিন্তু ভুলতে দিল না তার ছেলে যায়ান। যায়ানের বয়স মাত্র সাত, কিন্তু এখনই ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিজ্ঞানীদের গল্প শোনার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ, প্রতিদিন অন্তত দুজন বিজ্ঞানীর ওপরে কোনো মজার গল্প না শুনলে ঘুমাতে চায় না সে। ওকে প্রতিদিন বিজ্ঞানীদের আর গণিতবিদদের গল্প বলতে গিয়ে লেখক স্মৃতির তথ্যভান্ডারের সিন্দুকটা খুলে আবার ফিরে যান সেই বিজ্ঞানীদের নানা গল্পের জগতে। লেখক যায়ানকে বলেন, আইনস্টাইন, নিউটন, আর্কিমিডিস, মারি কুরি, এডিসনের গল্প, লেখকের সেই ছোটবেলার এবং এখনকারও সব স্বপ্নের নায়কদের কথা, যাদের প্রতিভা, আবিষ্কারের নেশা আর জ্ঞানের পিপাসা বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে চিরদিনের জন্য। এই গল্পগুলো বলতে বলতেই তার মনে হলো, আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো লিখে রাখা বড়ই দরকার। টিভি, ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমাদের শিশুরা কাদের নিয়ে ভাববে, কাদের কাহিনি শুনে অনুপ্রাণিত হবে? বিজ্ঞান মজার, বিজ্ঞান আনন্দের, বিজ্ঞানীরাও মজার মানুষ...
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের যে ক’জন তরুণ লেখক পাঠকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, চমক হাসান তাদের মাঝে অন্যতম। তিনি শুধু লেখক হিসেবেই নয়, একজন সফল ইউটিউবার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তিত্ব হিসেবেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুলাই কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন চমক হাসান। সেখানেই অতিবাহিত করেন শৈশব ও কৈশোর। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় পড়াশোনার পর তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলাইনা-তে পিএইচডি সম্পন্ন করছেন। চমক হাসান একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যাঁর আশা হলো- এদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা গণ্ডীবদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে সহজ ভাষায় লেখা পাঠ্যবই পড়বে এবং বড় হবে বিজ্ঞানকে ভালোবেসে, যার ফলে এ বিষয়ে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। গণিত ও বিজ্ঞানকে ভালোবেসে রচিত চমক হাসান এর বই ১৪টি। চমক হাসান এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো 'অঙ্ক ভাইয়া', 'অসাম স্টুডেন্টদের অসাম বিজ্ঞান প্যাকেজ', ‘গণিতের রঙ্গে হাসিখুশি গণিত', ‘গল্পে গল্পে জেনেটিক্স’ ইত্যাদি। চমক হাসান এর বই সমগ্র ছাত্র-ছাত্রীদের সহজে গণিত ও বিজ্ঞান বুঝতে নানাভাবে সাহায্য করে। গাইতে-পড়তে-শিখতে- জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করা এই মানুষটি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পড়াশোনাকে যথাসম্ভব আনন্দময় করে তুলতে। এদেশের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে সহজ ভাষায় সবচেয়ে আনন্দময় উপায়ে পাঠ্যবই পড়বে, এবং সেই সাথে তারা সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞানকে ভালোবেসে সবকিছু বুঝে বুঝে শিখব, মুখস্ত করে নয়- এই স্বপ্ন নিয়েই লেখালেখি চালিয়ে যাবার শপথ নিয়েছেন জনপ্রিয় এই তরুণ লেখক।