“প্রস্তাব" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ প্রস্তাব ফরহাদ মজহার’র প্রথম প্রকাশিত গদ্য বেরিয়ে ছিল। সেই উনিশ ছিয়াত্তর সালে তরুণ বয়সে। যে কবির চোখের সামনে অঙ্কুরিত হচ্ছিল জাতীয় আকাক্ষার বীজ, পল্লবিত হচ্ছিল সর্বত্র উত্থানের স্বর, স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করার তুমুল উচ্চারণ-- সেই অভিপ্রায়ের দীপ্তিমান দৃঢ়তায় নির্মিয়মান সত্তাকে জন্মলগ্ন। থেকে আকার ও আশ্রয় দিতে তৎপর যাঁর কাব্য প্রচেষ্টা স্বভাবতই তা ভাষা, বাক্যার্থ আর ভাবসম্পদের দার্শনিক। আঙ্গিনায় প্রবশে করে। বাংলাদেশ নামক সদ্য জেগে ওঠা রাষ্ট্র, তার রাজনীতিক সত্তার তাৎপর্য সন্ধানে ইতিহাস ও সংস্কৃতির অন্তর্গত উপাদান, অভিজ্ঞতাগুলাে কবিতার দিগন্ত ছাপিয়ে । দর্শনের মিমাংসায় নিশ্চিত করে নেবার সূচনায় তখন আলাে। ফেলে ছিলেন যে লেখাগুলােতে--তারই একত্রিত প্রবন্ধ সংকলন প্রস্তাব। কবির দার্শনিক হয়ে ওঠা কিম্বা দর্শনের মুখােমুখি দাঁড়ানাে কবি সত্তার কাছে ভাষা ও দর্শনের সম্পর্ক প্রস্ফুটিত হবার কালে রচিত ভাবনার উত্তরণ চিহ্নিত এই গ্রন্থভুক্ত লেখাগুলাে। এটা ছিল, আজকের ফরহাদ মজহারের চিন্তার প্রত্যয়ী অবস্থান গ্রহণ, সক্রিয় চর্চায় নিয়ােজিত হবার সন্ধিক্ষণ। ইতিহাসের সুনির্দিষ্ট পর্বে নিজের জন্য যে মূর্ত ভূমিকা নির্ধারণ করে তিনি এগিয়ে চলতে চেয়েছেন তার পারম্পর্য, পরিপূর্ণতা এমনকি খােদ মােড় বদলের জায়গাগুলাের ছাপও পাঠক এখন মিলিয়ে নিতে পারবেন। অনায়াসে। তখনকার চিন্তার উৎস আর এখনকার ভাবনার যােগসূত্র ধারাবাহিকভাবে একটি স্পষ্ট অভিমুখের দিকে এগিয়েছে। সেই অভিমুখ ইতিহাসের কর্তাসত্তা নির্মাণে নিজস্ব ভাব, ভাষা, সংস্কৃতির মধ্যে প্রবাহিত অন্তলীন চেতনার নিহিত শক্তি ও সম্পদের ব্যবহার; তাকে পুনরুদ্ধারের জন্য ঔপনিবেশিক পরিমণ্ডলের বাইরে এসে এর প্রয়ােগ সাফল্যের প্রকৃত রূপটি পুনর্গঠিত করা। এই অভিযাত্রায় তিনি বিখ্যাত ফরাসি নৃতাত্ত্বিক লেভি স্ট্রস’র কাঠামােবাদের অনুপ্রেরণায় সাহসের সাথে বহুদূর পৌঁছাতে পেরেছিলেন। নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছেন; আমাদের নিজস্ব ভাষায়, লােককল্পিত রচনাশৈলীর ভেতর বাহিত জীবনযাপনের মধ্যে পুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠা অন্তর্বিন্যস্ত যেসব ভাবভাবনা আগলে ধরে রেখেছে তা কেনাে অংশেই য়ুরােপীয় বিজ্ঞানের চেয়ে খাটো নয়; নিখিল-ভাবনার সমক্ষ একটি সামগ্রিক চিন্তা কাঠামাে, রূপকল্প আমাদেরও আছে। এই দুধর্য প্রস্তাবনাই প্রস্তাব বইটির ভারকেন্দ্র দখল করে আছে। সেই। নিরিখে-- ভাষা, শিল্প, চিন্তা, মানবীয়তা ও সঙ্গীত-আমাদের এসব ভাবসম্পদের মৌলিক স্ট্রাকচার প্রত্যাশী নিবিষ্ঠতা ধারণ করেছে লেখাগুলাে। দীর্ঘ প্রায় তিনি যুগ পরে, এখন পাঠক আবারাে তার চিন্তার আদি বীজগুলাে সাম্প্রতিক ভাবচর্চা ও জীবন যাপনের ভিতর কীভাবে অন্তঃসলিল তা পরখ করতে পারবেন।
জন্ম ১৯৪৭ সালে, নোয়াখালী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : ঔষধশাস্ত্র ও অর্থনীতি, প্রিয় স্মৃতি : মাইজদী কোর্ট, প্রিয় স্থান : বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নয়াকৃষির বিদ্যগাঘর। তিনি একজন বাংলাদেশি কবি, কলামিস্ট, লেখক, ঔষধশাস্ত্রবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী এবং পরিবেশবাদী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ওষুধশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের দি নিউ স্কুল ফর সোশাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সামাজিক অর্থনীতিতেও গবেষণা করেছেন। চিন্তা নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক মজহার উবিনীগ এনজিও গঠন করে নয়াকৃষি আন্দোলনও শুরু করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল: প্রস্তাব, মোকাবিলা, এবাদতনামা ও মার্কস পাঠের ভূমিকা।