বিশ্ববিখ্যাত মহাকাশবিজ্ঞানী এবং কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (Brief history of time) বইয়ের লেখক স্টিফেন হকিং বর্তমানে এবং সুনিকট ভবিষ্যতে মানবজাতির সম্মুখীন সবচেয়ে জটিল সমস্যাসমূহের ও বড় প্রশ্নগুলোর বিষয়ে তার বিজ্ঞান-নির্ভর চূড়ান্ত চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন তার সর্বশেষ এই বইয়ে। স্টিফেন হকিং আইনস্টাইনের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং মহাকাশবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখার জন্য স্মরণীয়। তিনি তার হাস্যরসের-ও জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তিনি মহাবিশ্বের উৎস এবং কৃষ্ণগহবরের প্রকৃতি সম্পর্কে লক্ষ লক্ষ পাঠককে সহজবোধ্য ধারণা দিয়েছিলেন, এবং ALS -এ আক্রান্ত হয়েও তার কাজের মাধ্যমে অনেককে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। হকিং বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবীর বড় বড় সমস্যাগুলোর সমাধানে বিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, এই বইটি সেই ধারণার বিস্তারিত বিবরণ। এখন এই গ্রহ ও মানবজাতি জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশসহ বিশাল চ্যালেঞ্জসমূহের মুখোমুখি হচ্ছে- তিনি এইসব ব্যাপারে আলোকপাত ও বিজ্ঞান-নির্ভর আলোচনা করেছেন এই বইয়ে। মানবজাতি কি সহস্র শতাব্দী ধরে টিকে থাকবে? আমাদের কি অন্য গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করা উচিত? কৃষ্ণগহ্বরে কী আছে? সময় ভ্রমণ কি সম্ভব? ইত্যাদি জটিল প্রশ্নের বিজ্ঞান-নির্ভর উত্তর পাওয়া যাবে এই বইয়ে।
Theory of Everything চলচ্চিত্রে স্টিফেন হকিং এর চরিত্রে অভিনয় করে অস্কারবিজয়ী এডি রেডমাইনের লেখা মুখবন্ধ, নোবেলবিজয়ী প্রফেসর কিপ থ্রনের ভূমিকা, এবং হকিং এর কন্যা লুসি হকিংয়ের স্মৃতিকথা নিয়ে সাজানো এই বই নিমগ্ন পাঠকদের জ্ঞান-তৃষ্ণা ও কৌতূহল মেটাবে বলা যায় নির্দ্বিধায়।
স্টিফেন উইলিয়াম হকিং একাধারে একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, মহাবিশ্ববিজ্ঞানী এবং লেখক। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক মহাকাশবিদ্যা বিভাগের পরিচালক এবং অধ্যাপক ছিলেন। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই মেধাবী মানুষটির নাম শোনেননি, এমন পড়াশোনা জানা মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্টিফেন হকিং ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত মহাকাশতত্ত্ববিদ ডেভিড সিয়ামার তত্ত্বাবধানে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দেন। গ্যালিলিওর জন্মের ঠিক তিনশ বছর পর জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী তখন থেকেই তাঁর প্রতিভার স্ফূরণ ঘটাতে থাকেন। পিএইচডি শেষ করার আগেই মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর জীবন আচমকা থমকে দাঁড়ায়। মোটর নিউরন রোগ বা এমায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন হকিং। এই রোগে পেশি নাড়ানোর জন্য দায়ী নিউরনগুলোর মৃত্যু ঘটতে থাকে এবং শরীরের প্রায় সব অংশ অচল হয়ে যেতে থাকে। বাগদত্তা জেইন ওয়াইল্ড ও সুপারভাইজার সিয়ামার অনুপ্রেরণায় আশার সঞ্চার হয় তাঁর মাঝে। ঠিকমতো কলমটিও ধরতে না পারা এই বিজ্ঞানী ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞানী রজার পেনরোজের সাথে তাঁর কালজয়ী ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব প্রকাশ করেন, বর্তমানে যা হকিং রেডিয়েশন নামেও পরিচিত। তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টস এর সম্মানিত ফেলো এবং পলিটিক্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ খেতাবে ভূষিত হন। লেখক হিসেবেও হকিং বিস্ময়কর কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। স্টিফেন হকিং এর বই সমূহ পাঠক সমাজে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর নিজের তত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে রচিত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ দিয়ে তিনি ব্রিটিশ সানডে টাইমস এর বেস্ট সেলার তালিকায় ছিলেন টানা ২৩৭ সপ্তাহ। স্টিফেন হকিং এর রচনা সব ধরনের পাঠকদের কাছে জটিল বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা সহজভাবে জানার পাথেয় হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানীকে ১৯৭৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপকের সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পাঠকনন্দিত স্টিফেন হকিং এর বই সমগ্র হলো ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’, ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’, ‘মাই ব্রিফ হিস্ট্রি’, ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’, এবং ‘দ্য নেচার অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম’। ২০১৪ সালে ইউনিভার্সাল পিকচার্স ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এই সিনেমায় স্টিফেন হকিং এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য এডি রেডমেইন জিতে নেন অস্কার। শারীরিকভাবে ভীষণ রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও হকিং তাঁর গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সাথে চালিয়ে যান। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।