ভালােবাসা এমন একটি জিনিস যা ছাড়া কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। যদিও ভালােবাসাকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করা হয় না, তবুও আমি ভালােবাসাকে ‘মৌলিক চাহিদা' হিসেবেই ধরি। কারণ ভালােবাসা হলাে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। প্রশ্ন হলাে : তাহলে ভালােবাসা ছাড়া কি আসলেই কেউ বেঁচে থাকতে পারে না? হ্যা পারে। যে কখনও ভালােবাসা পায়নি, সে কখনও ভালােবাসা কী জিনিস তা বােঝে না, তার পক্ষেই হয়তাে সম্ভব ভালােবাসা ছাড়া বেঁচে থাকা। আবার প্রশ্ন হচ্ছে : যে ভালােবাসা পেয়েছে কিন্তু হারিয়ে ফেলেছে, সে কি বেঁচে থাকে না? হ্যা থাকে। তবে সেটাকে আমি বেঁচে থাকা বলব না। জিন্দা লাশ’ বলে একটি কথা আছে। যারা ভালােবাসা পেয়েও তা হারিয়ে বেঁচে আছে, তারা হয়তাে একটি ‘জিন্দা লাশ’ হিসেবেই বেঁচে থাকে, যা সে কাউকে বােঝাতে পারে না, শুধু গােপনে সয়ে যায়। ভালােবাসা কি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালােবাসা? না, ভালােবাসা হতে পারে বাবামায়ের ভালােবাসা, ভাইবােনের ভালােবাসা, আত্মীয়স্বজনের ভালােবাসা, বন্ধু বান্ধবের ভালােবাসা ইত্যাদি। ভালােবাসারও একটা সময় আছে। সকল ভালােবাসা সবসময় থাকে না। এক এক সময় এক এক মানুষের ভালােবাসায় বেঁচে থাকে মানুষ। পৃথিবীর সকল মানুষের ভালােবাসা পেলেও একটা সময় এসে একজন প্রিয় মানুষের ভালােবাসা খুবই প্রয়ােজন হয়ে পড়ে। সে মানুষটার ভালােবাসা ছাড়া পৃথিবীটা যেন শূন্যই মনে হয়। এ সময়টায় প্রিয়। মানুষের জন্য মন অস্থির হয়ে থাকে। আর এজন্যই মানুষ প্রেমে পড়ে। সবার ভাগ্যে যে প্রেম জোটে সেটাও নয়। তবে যাদের ভাগ্যে প্রেম জোটে তারাই কি সবচেয়ে সুখী? মােটেও না। প্রেম যেমনিভাবে গড়ে ওঠে আবার তেমনিভাবে ভেঙেও যায়। আমরা সাধারণত মিলনকে প্রেমের সার্থকতা ভাবি। আসলে প্রেমের স্বার্থকতা মিলনে নয়, বিরহে। বিরহের মাঝেই একজন প্রেমিক অথবা প্রেমিকা তার প্রেমকে মনে রাখে। কিন্তু এই না-পাওয়া প্রেমের সার্থকতা কোথায়? এতে কি কোনাে সুখ আছে? মােটেও না। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কত কঠিন তা একমাত্র ভুক্তভােগীই বুঝতে পারে। আর এই কঠিন যন্ত্রণা নিয়েই মানুষ তার প্রেমের স্মৃতি স্মরণ করে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে একটি ‘জিন্দা লাশ’ হিসেবে। একজন ভুক্তভােগী তার হারানাে প্রিয়জনকে যত ঘৃণাই করুক না কেন, তারপরেও সে চায় সেই প্রিয়জন যেন তাকে মনে রাখে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য হয়তাে বাহ্যিকভাবে মনে রাখা সম্ভব হয় না, তারপরেও তার ইচ্ছা তার প্রিয়জন যেন হৃদয়ের ভিতরে মনে রাখে। সেই মনে রাখা থেকেই ‘তবুও মনে রেখাে' নামে একটি কবিতা লিখেছিলাম। আর সেই কবিতা থেকেই এই কাব্যগ্রন্থটির নাম দিয়েছি ‘তবুও মনে রেখাে’।
রেদোয়ান মাসুদ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কবি, ঔপন্যাসিক ও ছড়াকার। কবিতা দিয়ে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করলেও একজন ঔপন্যাসিক হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। রেদোয়ান মাসুদের জন্ম ৬ই জানুয়ারী শরীয়তপুরের জাজিরায়। তিনি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ তথ্য ভান্ডার বাংলাকোষ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সি ই ও, হেলথ এইড হাসপাতাল লিঃ এর পরিচালক ও জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল মোড়ল নিউজ এর প্রকাশক। ২০১৪ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মায়ের ভাষা’। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘অপেক্ষা-১’। ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ম্যাক্সিম ‘জোছনায় পোড়া চোখ’। তার শৈশব ও কৈশর কেটেছে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে। মাছ ধরা, ঘেলাধুলা ও বাগান করা ছিল তার প্রিয় শখ অথচ এই ইটপাথরের দেওয়ালঘেরা শহরে তাকে পেয়ে বসেছে লেখার জগতে। তবে শহরের এই যান্ত্রিক জীবনেও তাকে বারবার তাড়িয়ে বেড়ায় গ্রামের সেই মা ও মাটির গন্ধ। রেদোয়ান মাসুদ দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্থ মানুষকে খুব বেশি ভালবাসেন। শত ঝামেলার মাঝেও তিনি তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্যবোধ করেন না। তিনি ততোটা জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনে আগ্রহী নন। তাই আধুনিকতার এই যুগে একেবারে সাধারণ জীবনযাপন করছেন।