অনুবাদক পরিচিতি কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক এ সময়ের প্রতিভাদীপ্ত লেখক ও অনুবাদক। লেখালেখির জগতে পদার্পণ শৈশবকালেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করে ২০০২ সালে জামিয়া ফারুকিয়া করাচি থেকে তিনি তাখাসসুস ফি উলুমিল ফিকহের ডিগ্রি নেন। নাজিরহাট বড় মাদরাসা থেকে সুদীর্ঘ দুই যুগেরও অধিককাল ধরে নিয়মিত প্রকাশিত মাসিক ‘দাওয়াতুল হক’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সুচিন্তা’ ও ‘শিকড়’ও তার সম্পাদিত সাময়িকী। এছাড়া নিরলসভাবে লিখে চলেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায়। আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষণী লেখায় তাঁর মুনসিয়ানা। লক্ষ করার মতাে। ১৯৮১ সালের ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জন্ম নেয়া বরেণ্য এই আলেমের অর্ধশতাধিক বই রয়েছে বাজারে। আরবি, ইংরেজি, উরদু ও ফারসি থেকে অনুবাদ করেন সমান দক্ষতায় । ‘রাজকুমারী’ সিরিজ উপন্যাস এবং ড. আলি সাল্লাবির সাহাবাচরিত সিরিজ অনূদিত হয়েছে তাঁর হাতে। তাঁর মৌলিক বইয়ের মধ্যে রয়েছে : নাফ তীরের কান্না; স্বর্ণযুগের সম্রাট; অপরাধ : উৎস ও প্রতিকার; পুত্রের। প্রতি পিতার পত্র ও উপদেশ; আসহাবে। কাহাফ; দেহমনের পাপ; পড়ালেখার কলাকৌশল; ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল হারাম; মানবদেহের বিস্ময়কর রহস্য; অরুণ। প্রাতের তরুন দল ইত্যাদি। ‘আল্লাহকে পেতে হলে আনােয়ার লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত তাঁর প্রথম অনুবাদগ্রন্থ। আনােয়ার লাইব্রেরি থেকে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. প্রণীত তাফসীরুল আহলাম’ ও ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. প্রণীত ‘আল-খাসাইসুল কুবরা’সহ বেশ কিছু বই এই লেখকের হাতে অনূদিত হয়ে আসছে, ইনশাআল্লাহ।
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।