"রাজাকার সমগ্র" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্য, আলশামশ- বিভিন্ন নামের গ্রুপ কিন্তু মূলত তারা। একই- স্বাধীনতা বিরােধী। ১৯৭১ সালে এদের কাজ ছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগী হিসেবে মুক্তিকামী মানুষদের দমন। এদের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত ছিল রাজাকার-রা, এবং বাংলাদেশে এই নামটি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পরিচিত। সাধারণত: স্বাধীনতা বিরােধীদের এদেশে রাজাকার নামেই অভিহিত করা হয়। খুন, জখম, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, আগুন লাগিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, হানাদার বাহিনীকে পথ দেখিয়ে দেওয়া এমন কোন জঘন্য কাজ নেই যা করেনি রাজাকার বা আলবদররা। এবং এদের একটা বড় অংশ ছিল বাংলাদেশ জামাতী ইসলামীর সদস্য বা রিক্রুট। একারণেই বঙ্গবন্ধু জামাতে ইসলাম বা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং এদের শাস্তি দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে এদের বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের আইন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে লে. জে. জিয়াউর রহমান এদের পুণর্বাসিত করেন, পুষ্ট করেন এবং পরবর্তীকালে তার পত্মী বেগম জিয়া এদের ক্ষমতায় নিয়ে যান। এরা হলেন রাজাকার বন্ধু।' ১৯৭২ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিদায়ের জন্য দাবি উঠছে। বর্তমান সরকার ঘােষণা করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। তরুণ সমাজ মহাজোট-কে এ কারণে ভােট দিয়েছে। গত দু’যুগ ড. মুনতাসীর মামুন যেমন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সােচ্চার থেকেছেন, জনমত গড়তে সাহায্য করেছেন। গত দু'দশক ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রাজাকার ও রাজাকার বন্ধুদের নিয়ে। রচনার সংকলন রাজাকার সমগ্র । রচনাগুলি বিচ্ছিন্ন হলেও গত দু'দশকে বাংলাদেশে রাজাকারদের উত্থানের ধারাবাহিক ইতিহাস। পাওয়া যাবে। এ গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধের পাঠকদের জন্য। এক অনবদ্য সংকলন। বর্তমান সময়ের জন্য। আরাে বেশি অপরিহার্য।
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।