কাসিদাটি নিয়ে কেন হৈ চৈ? ::::::::::::::::::::::::::::::: হিন্দুস্তানে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রায় ২০০ বছর পূর্বে যখন মুঘল শাসকদের কারও জন্মই হয়নি, তখন তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীতে তাদে নাম ও শাসনকাল ধারাবাহিক বর্ণনা করেছেন। যা বাস্তবায়ন হয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। শুধু তাই নয়, ইংরেজদের হিন্দুস্তানে আগমন থেকে নিয়ে ১৮৫৭ সালের আজাদির লড়াইয়েও হযরত নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ.-এর এই কাসিদার বড় ভূমিকা ছিল। এই কাসিদাতে তিনি ৯০০ বছর পূর্বেই লিখেছিলেন, ইংরেজরা হিন্দুস্তান দখল করে নেবে। অর্থাৎ তিনি এমন সময়ে এ কথা লিখেছিলেন, যখন হিন্দুস্তানের কেউ ইংরেজদের নামও জানত না। তিনি এ কথাও লিখেছিলেন যে, এই উপমহাদেশে ১০০ বছরের কিছু কমসময় ইংরেজদের রাজত্ব স্থায়ী হবে। এই উপমহাদেশে ইংরেজদের শাসন শুরু হয় ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর থেকে। সুতরাং যখন ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের উপলক্ষ্য তৈরি হয়েছিল এবং আজাদির স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছিল, তখন সেই অগ্নিকে প্রজ্জ্বলিত করতে নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ.-এর এই ভবিষ্যাদ্বাণীও লোকচক্ষুর অন্তরালে পূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। কেননা, হিন্দুস্তানের মুসলমান ভাবছিল ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সুতরাং আজাদি অর্জনে এবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে চূড়ান্ত হামলা চালানো যায়। কিন্তু আফসুসের বিষয় হলো মুসলমানগণ নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ.-এর এ সম্পর্কিত পংক্তি বুঝতে ভুল করেছিল। ভুলটা এমন ছিল যে, ১৮৫৭ সালের ইংরেজ বিরোধী আজাদির লড়াইয়ে ২০/২২ বছরের এক নওজোয়ানও অংশগ্রহণ করেছিল। তার নাম ছিল আব্দুল মাবুদ। ১৮৫৭ সালে মুসলমান যখন ইংরেজদের হাতে পরাজিত হয়, তখন আব্দুল মাবুদের নিকট একজন বুজুর্গ এসে বলেন, যেই আজাদির জন্য তোমরা লড়াই করছ, তা ৯০ বছর পর লাভ করবে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, ইংরেজদের পূর্ণ রাজত্ব শুরু হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। ১৭৫৭ সালে নয়। আল্লাহর ই”ছা যে, সেই আব্দুল মাবুদ সাহেব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও জীবিত ছিলেন এবং ১৬২ বছরের দীর্ঘ হায়াত লাভ করেন। ১৮৫৭ সাল থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন এবং লড়াইসমূহে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে আব্দুল মাবুদ সাহেবের কবর রয়েছে ইসলামাবাদ h-৮ -এর কবরস্থানে কুদরতুল্লাহ শিহাবের কবরের পাশে। তার কবরস্ত পাথরে ১৬২ বছর হায়াত লাভের কথা লিখা রয়েছে। তার আলোচনা পাকিস্তানের পরিচিত লেখক ‘মুমতাজ মুফতি’ তার লিখিত কিতাব ‘আলখ নগরী’-তে এবং বেশ কয়েকজন লেখক তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য যে, এই আব্দুল মাবুদ সাহেব হলেন হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.-এর এক বুজুর্গ খলিফা। আব্দুল মাবুদ সাহেব মানুষের নিকট যেসব ঘটনাবলী বলেছেন, সেগুলোর মধ্যে কাসিদায়ে নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি রহ. ১৮৫৭ সালের আজাদীর লড়াইয়ে এক বড় ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করেছেন। ১৮৫৭ সালের আজাদীর লড়াই নিয়ে লেখা বেশকিছু কিতাবে এই কাসিদার আলোচনা রয়েছে। সুতরাং এই কাসিদার এক ঐতিহাসিক সনদও রয়েছে। এই কাসিদার গুরুত্ব এ থেকেও অনুমান করা যায় যে, ১৯০৫ সাল পর্যন্ত হিন্দুস্তানের ভাইসরয় হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী লর্ড কার্জন এই কাসিদাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কারণ এই কাসিদাতে লিখা ছিল, ১০০ বছর পর ইংরেজদেরকে হিন্দুস্তান থেকে বের করে দেয়া হবে। মুসলমানগণ এই কাসিদাকে খুব যত্ন করে রাখত। হিন্দুস্তানে ইসলামি ভূখণ্ড হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিনাশী শত্রু হিসেবে যাদেরকে আশংকা করা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারেও হযরত নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ. তার ভবিষ্যদ্বাণীতে সতর্ক করেছেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠান, তা ভেঙ্গে যাওয়া, ভারতের পরাজয় এবং মুসলমানদের উত্থানের সুসংবাদও দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়, তখনও সংবাদপত্রগুলোতে কাসিদায়ে নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি রহ.-এর নির্বাচিত বিভিন্ন অংশ প্রকাশ হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, নানা ষড়যন্ত্র ও স্বার্থপরতার কারণে যদিও মুসলমানদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু অচিরেই মুসলিম উম্মাহ এই ক্ষত কাটিয়ে উঠবে এবং হিন্দুস্তানে মুসলমানদের উত্থান হবে। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের লেখক ও গবেষক জনাব যায়েদ হামিদ যখন হযরত নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ.-এর ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে টিভি প্রোগ্রাম করেন এবং সোশাল মিডিয়াতে তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গযওয়াতুল হিন্দে মুসলিম ফৌজের বিজয়ের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তখন হিন্দু ও ইহুদিবাদি গোষ্ঠী এ থেকে মুসলিম উম্মাহর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার উদ্দেশে হিন্দুত্ববাদের উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবি, সিকাগো ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রফেসর চৌধুরী মুহাম্মদ নাইমকে লেলিয়ে দেয়। ভারতীয় প্রশাসন চৌধুরী নাইমকে এই দায়িত্ব অর্পন করে যে, সে যেন কেবল এই কাসিদাকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করেই ক্ষান্ত না হয়, বরং সরাসরি যায়েদ হামিদকেও বিতর্কিত প্রমাণে সচেষ্ট হয়। সুতরাং এর ভিত্তিতে চৌধুরী নাইম এ বিষয়ে গবেষণামূল দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করে। যেখানে সে গবেষক যায়েদ হামিদ এবং এই কাসিদাকে বিতর্কিত করতে সর্বপ্রকার চেষ্টা ব্যয় করেছে। তা সত্ত্বেও সে কাসিদার কিছু ঐতিহাসিক বাস্তবতা অস্বীকার করতে পারেনি। যেমন, এই কাসিদার সবচেয়ে পুরোনো নুসখাহ ১৮৫১ সালে শাহ ইসমাইল শহিদ দেহলভী রহ.-এর اربعين নামক গ্রন্থে ছাপা হওয়া, ১৮৫৭ সালের আজাদির লড়াই, ১৯২৪ সালের খেলাফত আন্দোলন, তাহরিকে হিজরত এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় এই কাসিদার ব্যাপক ভূমিকা রাখা, এসবের কোনোটাই সে অস্বীকার করতে পারেনি। চৌধুরী নাইম এ কথাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের ভাঙ্গনের পর পাকিস্তানী মুসলমানদের পুনরায় মুসলিম ভ্রাতৃত্বে উৎসাহিত করতে এই কাসিদা বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সে তার প্রবন্ধে ভেতরকার নাপাকি উগড়ে দিয়ে বলে, ‘আগত সময়ে (তথা মুসলিম উম্মাহকে পুনরুজ্জীবিত করনে এবং গযওয়াতুল হিন্দে) পাকিস্তান এক কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে, যায়েদ হামিদের এই বিপদজনক চিন্তাধারার একটা দিক তো এই যে, সে তার এই বক্তব্যের সমর্থনে বর্তমান যুগেরও কয়েকজন চিন্তাবিদ যেমন, কুদরতুল্লাহ শিহাব, মুমতায মুফতি এবং আশফাক আহমদের কাজ দ্বারা ফায়দা উঠাতে চাচ্ছে। যদিও এদের সকলেই উচু মাপের সাহিত্যিক, কিন্তু স্বঘোষিত চিন্তাবিদ হয়ে বসে আছে। এদের প্রবন্ধ পাকিস্তানে খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়া হয়.... আমাদের এ কথাও জেনে রাখা উচিৎ যে, দু’একটি জায়গা ব্যতীত কোথাও গযওয়াতুল হিন্দের আলোচনা পাওয়া যায় না। যায়েদ হামিদ যেভাবে এই কাসিদাকে আলোচনার বিষয় বানাচ্ছে অতীতে এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না..... অবশেষে যায়েদ হামিদ এ কথাও বলে যে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমান এক চূড়ান্ত লড়াইয়ের পর মুশরিক নিয়ন্ত্রীত হিন্দুস্তানের ওপর পূর্ণ বিজয় অর্জন করবে....’ প্রিয় পাঠক! মুসলিম নামধারী ভারতীয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবি চৌধুরী নাইমের আলোচনার চুম্বকাংশ থেকে যে বিষয়গুলো সামনে আসে, তার অন্যতম হলো ভারতীয় হিন্দুত্বাবাদী শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবিদের অনন্য মিশন হলো হিন্দুস্তানী মুসলমানদেরকে উজ্জীবিত করার সকল উৎস সমূলে ধ্বংস করা। কারণ, তারা এ কথা ভালো করেই জানে নবি কারিম ﷺ -এর হাদিস যেমন কখনো মিথ্যা হতে পারে না, ঠিক তেমনি মুসলিম উম্মাহর কোনো না কোনো অংশ নবিজির হাদিসকে বাস্তবায়ন করেই ক্ষান্ত হয়। আর তাই তারা হিন্দুস্তানী মুসলমানদের উজ্জীবিতকারী গযওয়াতুল হিন্দের হাদিস এবং রুহানি গোয়েন্দাবার্তাতুল্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে বিতর্কিত করতে ও ভুলিয়ে দিতে তাদের সর্বশক্তি ব্যয় করছে। যার ভূত ভারতীয় সেবাদাস হিসেবে পরিচিত বাংলার শাসকগোষ্ঠীর ওপরও ভর করেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন আলেমকে কেবল গযওয়াতুল হিন্দের আলোচনার অজুহাতে কারাবন্দী করার ঘটনা তা-ই প্রমাণ করে। যাই হোক, অবশেষে চৌধুরী নাইম তার প্রবন্ধের শেষদিকে এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, হযরত নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ.-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী আগত সময়গুলোতেও মুসলমানদের উজ্জীবিত করতে থাকবে এবং হিন্দুস্তানের মুসলমানরা এর দ্বারা দৃষ্টিভঙ্গিগত ও রুহানি শক্তি অর্জন করতে থাকবে.....
Title
কাসিদায়ে নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ. - ভবিষ্যদ্বাণী