মেয়েটা স্যাভলন খেয়েছে! হাসপাতালে পার্টিটা জমছে না আজ। জয়নাল সাহেবের মন ভালাে নেই। ঝা চকচকে সুন্দর একটা দিনে মন খারাপ হবার কথা না! সামনে টেবিলের ওপর লালবাগ রয়্যালের কাচ্চি, জাফরান-বাদামের শরবত, চিকেন টিক্কা আর লাবান রাখা আছে। জয়নাল সাহেবের প্রিয় খাবার। এই মুহূর্তে তিনি এসব ছুঁয়েও দেখছেন না। মূত্রনালীতে সমস্যা আছে তাঁর। প্রসাবের বেগ হয় একটু পরপর। জয়নাল সাহেব বাথরুমে যান। প্রসাবের ঝামেলা শেষ হবার পরেও কমােডের ওপর বসে থাকেন অনেকক্ষণ। বয়সে হচ্ছে বােঝা যায় আজকে ছুটির দিন। সপ্তাহে একটি দিন জয়নাল সাহেব নিজের মতন করে কাটান। ঠিকাদারির ব্যবসা তার দু'হাতে টাকা কামান। ভাই এমপি নিজ এলাকায় সরকারী সব কাজের টেন্ডার নিজেই পান। ব্যবসা নিয়ে ভাবনা নেই খুব একটা তাই তার চেহারা ভালাে। নাকটা সামান্য একটু বোচা। নাকের কারণে চেহারায় চাইনিজ ভাব চলে এসেছে। এ নিয়ে অবশ্য জয়নাল সাহেবের দুঃখ নেই। তিনি শরীরের ভালাে খেয়াল রাখেন। নিয়মিত জিমে যান। মেনিকিউর, পেডিকিউর, হারবাল ফেসিয়াল করান। শরীরের লােম উঠান। কয়েকদিন পরপর ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করান। তার বন্ধুর হাসপাতালে চেক আপ ফ্রি।। এই হাসপাতালে তিনি ছুটির দিনে আড্ডা দিতে চলে আসেন। হাসপাতালে তার জন্যে দুটো ঘর আলাদা করে সাজানাে হয়েছে। আরাম আয়েশের সব কিছুই আছে এ ঘরে। ছুটির দিনে তিনি বাড়ি ফেরেন দেরি করে। বন্ধুর তৈরি এই হাসপাতালেই কাটান। বেশিক্ষণ। কেউ সন্দেহ করেনা। বাসার বউ ভাবে তিনি চেকআপ করানাের জন্য এসেছেন। বউ তার বােকা আছে। বােকা বউয়ের স্বামীর জীবন বড় আনন্দের!
কিঙ্কর আহ্সান এর জন্ম ১৯৮৯ সালের ৬ জুলাই কুষ্টিয়া জেলায়। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগে। সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে সক্রিয় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সংঘ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, কন্ঠশীলন, মুক্তআসর, বিল্ড বেটার বাংলাদেশসহ আরও অনেকগুলো সংগঠনের সাথে। লেখালেখির শুরু তার দেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে। টানা পাঁচ বছর বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কন্ঠ, বাংলানিউজ, পরিবর্তনসহ দেশের প্রায় সব শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করেছেন। ছোটগল্প লেখার পাশাপাশি কালের কন্ঠের 'বাতিঘর' পাতায় শিক্ষানবিস সাব এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। সহকারী স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন 'কে হতে চায় কোটিপতি' টিভি শো'তে। পাশাপাশি 'মার্কস অলরাউন্ডার', 'হাসতে মানা', 'হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ নেভী' ও 'বাংলাদেশ সুপার লীগ-গ্রান্ড লোগো আনভেইলিং' এর প্রধান স্ক্রিপ্ট রাইটার ছিলেন। এই স্বল্প সময়ের সৃজনশীল ক্যারিয়ারেও বেশ সাড়া ফেলেছে কিঙ্কর আহ্সান এর বই সমগ্র। লেখালেখির পাশাপাশি ফিল্মের কাজেও জড়িয়েছেন এই লেখক। 'পাতার নৌকা', 'ক্রিং ক্রিং' ও 'জলপরানি' টেলিফিল্মের কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অনেকের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাথে ডকুমেন্টারি নির্মাণের কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন সংস্থায়। সবকিছুর পরও যেন লেখালেখিই কিঙ্কর আহ্সান এর আসল জায়গা। বইমেলায় প্রকাশিত 'আঙ্গারধানি', 'কাঠের শরীর', 'রঙিলা কিতাব', 'স্বর্ণভূমি', 'মকবরা', 'আলাদিন জিন্দাবাদ' ইত্যাদি কিঙ্কর আহ্সান এর বই সমূহ, যা বেশ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে।