নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও রূহে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই বস্তু قَوْلَهُ عَلَيْهِ السَّلَامِ أَوْلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُوْرِى প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদিসে উল্লেখিত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যা স্রষ্টার প্রথম সৃষ্টি, প্রকৃতপক্ষে উক্ত নূরই তাঁর পবিত্র রূহ। এ সম্পর্কে কতিপয় প্রমাণ পেশ করছি। সকল রূহ-দেহ সৃষ্টির পূর্বেই সৃষ্টি হয়েছে। শরীয়তের পরিভাষায় রূহকে বলা হয় 'আলমে আমর' আর দেহকে বলা হয় 'আলমে খালক'। সকল আদম সন্তানের দেহ মাতৃগর্ভে বিভিন্ন উপাদান দ্বারা সৃষ্টি হয়। মাতৃগর্ভে দেহের বয়স ৪ মাস হলে পূর্বে সৃজিত রূহুকে দেহে প্রবেশ করে দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারেও তা-ই হয়েছে। তাই উক্ত 'নূর' কিছুতেই তাঁর দেহ সৃষ্টির উপাদান হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য নবীগণের রূহ এমন কি অন্যান্য সাধারণ মানুষের রূহকেও অনেক হাদিসে 'নূর' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 'মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়ার' শরাহ 'জুরকানী' গ্রন্থের ১ম খণ্ডে ৪৪, ৪৬ ও ৪৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, উক্ত নূরকে অর্থাৎ তাঁর রূহকে দেহের পূর্ণাঙ্গ আকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মানুষের রূহের আকৃতি তার দেহের আকৃতির অনুরূপ হয়ে থাকে। তদ্রূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহকেও তাঁর দেহের আকৃতির অনুরূপ আকৃতি দেয়া হয়েছিল। হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. তাঁর রচিত 'মাদারিজুন নবুওয়াত' গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৬০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, হযরত জাবের রা. এর রেওয়ায়েত-সা.أَول مَا خَلَقَ الله روح مَحمد অর্থাৎ, আল্লাহর সৃষ্ট যাবতীয় বস্তুর মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ-ই প্রথম। 'মিরক্বাত শরহে মিশকাতের' ১ম খণ্ডের ১৬১ পৃষ্ঠায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত আছে- أول مَا خَلَقَ الله روی অর্থাৎ, সর্ব প্রথম আল্লাহ আমার রূহকে সৃষ্টি করেছেন। 'দাক্বায়েকুল আখবার ফী যিকরিল জান্নাতি ওয়ান-নার' গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের 'নূর'কেই তাঁর রূহ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, 'নূর' আর রূহ একই বস্তু। বলার অবকাশ রাখে না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেশ মোবারক নূরের তৈরি হওয়া, আর তাঁর মধ্যে নবুওয়াতের 'নূর' থাকা এক কথ নয়। আল্লাহ তা'আলা সকল মুসলমানকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।