কথাসাহিত্যিক বদিউল আলমের ‘শাহেদ’ একটি উপন্যাস। উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র শাহেদকে ঘিরেই এ উপন্যাসের গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয়েছে। আটটি পর্বে সাজানো হয়েছে পুরো উপন্যাসটিকে। শাহেদ তার গ্রামের স্কুলের একজন শিক্ষক। এমএ ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া চৌকস মেধাবী ছাত্র। কিন্তু ভালো একটা চাকরির অভাবে পড়ে আছে এ গ্রামে। শাহেদের ক্লাসের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ অনেক। তার পড়ানোর রীতি পদ্ধতি ছাত্রদের ভালো লাগে। একদিন ক্লাসরত অবস্থায় স্কুলের হেড স্যার এসে শাহেদকে খবর দেয় তার জরুরি একটি চিঠি এসছে। চিঠি খুলে দেখতে পায় একটি ব্যাংকে তার চাকরি হয়েছে। এরপর বদলে যায় ধীরে ধীরে শাহেদের জীবন। নানা স্মৃতি হাতছানি দেয় শাহেদের মনে। তার মনে পড়ে বিশ^বিদ্যালয় জীবনের নানা কথা। মনে পড়ে তার বন্ধু বান্ধবীদের কথা। তাদের সাথে কাটনো সুন্দর সময়গুলো তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে ভালোলাগার আবেশে। ‘মিলি ভাবে, হঠাৎ এক দিনের আলাপে সব কথা বলা ঠিক হবে না। তা ছাড়া ডালিয়া ওর বান্ধবী। সারাক্ষণ একসঙ্গে চলে। আর ডালিয়া শাহেদের জন্য একাট্টা হয়ে আছে মিলিও তা জানে। ডালিয়া শাহেদকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মিলিও চায় না ডালিয়াকে কষ্ট দিতে, মন ভাঙতে। কিন্তু ভালোবাসা এমন কেন?’ রোমান্টিক উপন্যাস যারা পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য এ বইটি হতে পারে পারফেক্ট। ঔপন্যাসিক বদিউল আলম খুব স্বাবলীল ও সুন্দরভাবে প্রেম ভালোবাসার যে একটি মনোজাগতিক জগত রয়েছে তার ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুণভাবে। উপযুক্ত সংলাপ আর মার্জিত বাক্যের মধ্য দিয়ে সুপাঠ্য করে তুলেছেন এ উপন্যাসটিকে। শাহেদ এ সমাজেরই একজন। জীবেনর নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার যে সংগ্রাম তা পাঠ করলে আমাদের উজ্জিবীত করবে। আমাদের প্রেরণার নাম হবে শাহেদ। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় খাজুরিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এ প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক সাহিত্যের আরও বেশ কয়েকটি শাখায় সমানভাবে সক্রিয় রয়েছেন। তার পাঠক শ্রেণির মধ্যে আকর্ষণ ও ভালো লাগার জায়গা তিনি করে নিয়েছেন তার লেখা দিয়ে। ব্যক্তি জীবনে সফল একজন সরকারি আমলা হিসেবে। সাহিত্যজগতেও দিন দিন তার সাফল্য আসুক নান্দনিক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।
বদিউল আলম। কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তিনি ১৯৫৬ সালের ৫ মে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় খাজুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম হাজী সেকান্দর আলী মিয়া। মা মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগম। কবি বদিউল আলম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হতে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮২ সালের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন। মাঠপর্যায়ে কর্মরত থাকাকালে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের যুগ্মসচিব পদ থেকে তিনি অবসরে এসে সাহিত্যাঙ্গণে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। নিসর্গপ্রেম, বিরহ, বেদনা, বাস্তবতা, সামাজিক, মনস্তাত্তি¡ক ও মানবিক বিষয়গুলো কবির কবিতায় নান্দনিক এবং সাবলীলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একই সঙ্গে কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ জুলুভাই (২০১৯) ও উপন্যাস- ফারু (২০১৯) শাহেদ (২০২০) শেষ উপহার (২০২০) কবরী (২০১২১) দেশে ও বিদেশে বাঙালি পাঠকদের ভূঁয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং আলোচিত ও সমাদৃত হয়েছে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ- বলাকার দেশে (২০১৮), কে তুমি তন্দ্রাহরণী (২০১৮), সূর্যাস্তের সাথেই যাব (২০১৯), গোলাপ ছুঁয়েছি নিমগ্ন আবেগে (২০১৯) কবি মহলে ও কবিতাপ্রেমিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। ‘শিশিরের ঠোঁটে বেদনার নীল’ তাঁর পঞ্চম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে তাঁকে পাওয়া যাবে আরও পরিণত ও কাব্যদৃষ্টি সম্পন্ন একজন পরিপূর্ণ কবি রূপে।