বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : উমর ইবনে আবদুল আজিজ রাহ.। ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ও রাষ্ট্রপরিচালনায় যিনি দ্বিতীয় উমর হিসেবে ইতিহাসে সুপরিচিত। তাঁর শাসনকাল খিলাফতে রাশিদার সোনালি শাসনের সঙ্গে তুলনা করা হয়; আর তাঁকেও বলা হয় খলিফায়ে রাশিদ। একজন পরিপূর্ণ আদর্শ ব্যক্তিত্ব বলতে যা বোঝায় এর সব গুণে গুণান্বিত ছিলেন—জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে গঠন করা, চরিত্র-মাধুরী দিয়ে পৃথিবীকে জয় করা, বিনয়, নম্রতা, ক্ষমা, সহশীলতা, ধৈর্য আর আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত থাকার অনন্য উদাহরণ উমর ইবনে আবদুল আজিজ রাহ.। একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, পরাশক্তি খিলাফতের কর্তৃত্ববান হয়ে কীভাবে রক্ষা করেছেন রাষ্ট্রীয় আমানত, দিয়েছেন জনগণের অধিকার, সমাজ থেকে দূর করেছেন জুলুম-অত্যাচার, বিদ্রোহ দমন করে প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তি; রাষ্ট্রীয় আইনকানুন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত উমর ইবনে আবদুল আজিজ রাহ.। ব্যক্তিজীবনের পরিশুদ্ধি, পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে আচরণ, সন্তানদের লালনপালন ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পদ্ধতির অসাধারণ এক চিত্র রয়েছে উমরের জীবনে। সর্বোপরি একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব, যাঁর ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের খুঁটিনাটি আমাদের জন্য অনুকরণীয়। যিনি একজন তাবিয়ি, যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ ও মুহাদ্দিস, মুজাদ্দিদ, রাষ্ট্রসংস্কারক, ইতিহাসের বিরল ব্যক্তিত্ব। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে জানার জন্য এই বই আপনাকে খুলে দেবে ইতিহাসের দরজা।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০