কিছু কিছু মানুষ আছে, যাদের সঙ্গে পরিচয় কবে থেকে তা সঠিক মনে রাখা যায় না। সেটা কি মুখোমুখি দেখা দিয়ে শুরু, নাকি আগেই তার লেখালিখির মাধ্যমে পরিচয়, মনে থাকে না! আবার এমনও হয় যে, দেখা হওয়ার পর এত দ্রুত কেউ কেউ মনের এতটা কাছাকাছি চলে আসেন, যাতে তারা বহু যুগের ঘনিষ্ঠ কেউ হয়ে ওঠেন। যেমন, আখতারুজ্জামান আজাদের সাথে একদিন মাত্র দেখা, ব্রত রায়ের সাথে আজও মুখোমুখি দেখাই হয়নি। তবু তাঁদের ভালো না বেসে পারা যায় না। এঁদের প্রথম জন কবি, দ্বিতীয়জনের আত্মিক বিষয় ছড়া। জুলফিকার রাসেল কবি, গানের কবি। তার গানের কবিতাগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। একেবারে প্রথম দিকে যে সামান্য দুর্বলতা তার লেখায় লক্ষ করেছি, তা ছন্দের ব্যবহারকে সুনিপুণ করে তোলার। বিষয়টি জেনে নেওয়ার পর অতি অল্প দিনেই রাসেল তাতে দক্ষ হয়ে ওঠে। রাসেলের গানের কবিতাকে কেন ভিন্ন ধরনের বলেছি, তার একটু ব্যাখ্যা দরকার। গানের কবিতা যারা লিখতে চান, দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া, শুরুর দিকে তাদের বিষয় নির্বাচন থাকে গতানুগতিক ও লঘু। তাদের অন্ত্যমিল প্রয়োগেও অতি সচেতন চেষ্টাটা চোখে পড়ে। কিন্তু জুলফিকার রাসেল শুরু থেকেই ছিলেন কবিতামনস্ক। এতে করে তার লেখায় একটু যে আড়ষ্টতা থাকতো, তা তার সময়ের সুর¯্রষ্টাদের জন্যে, একটু কঠিন হয়ে ওঠাই ছিল স্বাভাবিক। রাসেল এ বিষয়ে খুব দ্রুতই সচেতন হয়ে, সেই আড়ষ্টতাকে কাটিয়ে ওঠে। সত্তরের দশক থেকেই, কেন জানি না, অনুজপ্রতিম গানের কবিদের মধ্যে যারা একটু সচেতন, তারাই আমার কাছে এসেছেন। একটা শুভচক্র গড়ে উঠেছে লেখালিখির। সেই মুনশী ওয়াদুদ, নজরুল ইসলাম বাবু থেকে শুরু করে সিদ্দিক আবুবকর, জুলফিকার রাসেল হয়ে আজও এ ধারা চলছে। আমি এঁদের প্রত্যেকের মধ্যেই স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করেছি। জুলফিকার রাসেলের কথা প্রথম আমাকে জানিয়েছিলেন কবি নাসির আহমেদ। কিন্তু পরিচয় হওয়ার পর, রাসেল নিজের গুণেই, আমার এত কাছের হয়ে যায় এবং আমার পরিবারের সাথেও এমন ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে যে, আমাদের রাসেল বলতে আমরা একজনকেই বুঝি। কবে পরিচয় হয়েছিলো, সে প্রশ্নই মাথায় আসে না। ও যেন এভাবেই আমাদের আপন ছিল অনন্তকাল ধরে! মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
জুলফিকার রাসেল সাংবাদিক, গীতিকার ও কবি। জন্ম ১৩ নভেম্বর, ১৯৭৭। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই তিনি সুপরিচিত। গান লিখেছেন হিন্দি ভাষাতেও। ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি পাঁচ শতাধিক গান রচনা করেছেন। সেরা গীতিকবি হিসেবে ২০০৮, ২০১০ ও ২০১৩ সালে পেয়েছেন ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’, এবং ২০১৭ সালের সেরা আধুনিক বাংলা গানের জন্য ‘মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (বাংলা)। ২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের অফিসিয়াল গান ‘ও পৃথিবী এবার এসে’র কথা লিখেছেন জুলফিকার রাসেল। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও নাটকের জন্য সংগীত এবং বিজ্ঞাপনের জন্য প্রচুর জিঙ্গেল রচনা করেছেন। তার প্রথম কবিতার বই ‘কফিনে অযোগ্য পুরুষ’ প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। তিনি বেশ কিছু নাটক ও চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। ২০১০ সালে তার লেখা ‘আকাশ কতো দূরে' চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত হয়। পেশাজীবনে জুলফিকার রাসেল একজন সাংবাদিক। মাছরাঙা টেলিভিশন, আমাদের সময়, আজকের কাগজ এবং বাংলাবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদক।