"ফিতনার দিনে নির্জনবাস" ফ্লাপের কিছু কথ: “ঐ ব্যক্তির জীবনযাত্রাই সর্বোত্তম, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘােড়ার লাগাম ধরে প্রস্তুত থাকে। যখনই শত্রুর উপস্থিতি বা শত্রুর দিকে ধাবমান। হওয়ার শব্দ শুনতে পায়, তখন সে ঘােড়ার পিঠে আরােহণ করে দ্রুত বের হয়ে পড়ে এবং যথাস্থানে পৌছে শত্রু নিধন কিংবা শহীদ হওয়ার মর্যাদা সন্ধান করে। অথবা যে ব্যক্তি তাঁর মেষপাল নিয়ে কোনাে পাহাড় চূড়ায় বা (নির্জন) উপত্যকায় বাস করে। যথারীতি সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশােধ করে এবং আমৃত্যু তাঁর প্রভুর ইবাদাতে লিপ্ত থাকে। তাঁর জীবনযাত্রাই সর্বোত্তম। এই ধরনের লােক সর্বদা কল্যাণের মধ্যে থাকে।” ভূমিকা: সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। আমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি। তার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাদের নফসের কুমন্ত্রণা, আমলের কু-পরিণাম থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি যাকে হিদায়াত করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর যাকে তিনি প্রথভ্রষ্ট করেন, তার কোনাে পথপ্রদর্শক থাকে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি—তিনি ছাড়া আর কোনাে উপাস্য নেই। তাঁর কোনাে অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি—মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। “হে মুমিনগণ, তােমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেভাবে ভয় করা উচিৎ। আর তােমরা প্রকৃত মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করাে না।” (সূরাহ আলে-ইমরান: ১০২) “হে লােক সকল, তােমরা তােমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তােমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক প্রাণ/ব্যক্তি থেকে। আর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে। এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তােমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তােমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তােমাদের উপর পর্যবেক্ষক।” (সূরাহ নিসা: ১) “হে ঈমানদারগণ, তােমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তােমাদের জন্য তােমাদের কাজগুলােকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তােমাদের পাপগুলাে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।” (সূরাহ আহযাব: ৭০-৭১) “নিশ্চয় সর্বসত্য বাণী হলাে আল্লাহর বাণী—আল-কুরআন। আর সর্বোত্তম পথ হলাে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ—আস সুন্নাহ৷ সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলাে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভাবন ঘটানাে। আর দ্বীনের মধ্যে প্রতিটা নবােদ্ভাবিত বিষয় হলাে বিদআত। প্রত্যেক বিদআত হলাে ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।”[১] পাঠক! এই বইটি নিঃসঙ্গতা ও নির্জনতার প্রতি উদ্ভুদ্ধ ও উৎসাহমূলক। অধিক মেলামেশা ও মাত্রাতিরিক্ত সামাজিকতার ব্যাপারে নিরুৎসাহক। সম্ভবত এ বিষয়ে এটিই প্রথম রচিত কোনাে বই। সালাফগণ শরিয়ত সম্মত যে নির্জনতা অবলম্বনের আহবান করেছেন, তার অর্থ এই নয় যে—নামাযের জামা’আত ও জুম’আ আদায়েও মানুষ থেকে দূরে থাকবে— পরস্পর সালাম ও সম্ভাষণ এবং ইবাদাত পালনে মানুষের যে দায়িত্ব রয়েছে, তা এড়িয়ে যাবে। বরং জামা’আতবদ্ধভাবে যে ইবাদাত ও দায়িত্ব আছে, তা আপন গতিতেই চলবে। মানুষের মাঝে দৈনন্দিন যে সুন্নাহ ও স্বভাবজাত সুন্দর আদর্শগুলাে রয়েছে, সেগুলােও থাকবে। তবে নির্জনতা অবলম্বন করার বিষয়টি ব্যতিক্রম। এটা অবলম্বন করা হবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ও প্রেক্ষাপটে, এবং নিয়ম-নীতির ভিত্তিতে। এছাড়া সব কিছুই তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও প্রবাহের উপর থাকবে। যতক্ষণ না তার মাঝে ভিন্ন কিছু প্রবেশ না করে—গ্রহণযােগ্য কোনাে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। কেননা, সালাফগণের নিকট নির্জনতা অবলম্বন দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে মানুষের সাথে। অতিরিক্ত ও অপ্রয়ােজনীয় মেলামেশা, সাহচর্য ও সান্নিধ্য ত্যাগ করা।২] প্রিয় পাঠক! সালাফগণের জীবনাচার দ্বারা প্রমাণিত এবং শরিয়ত সম্মত যে নির্জনতা, আর বৈরাগী ও সন্নাসীদের আবিষ্কৃত নির্জনতার মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক—যথেষ্ট ব্যবধান। দুটি [১] তিরমিযি: ২৬৭৬, আবু দাউদ: ৪৬০৭ [২] আল উলাতু লিল খাত্তাবি: ১১-১২