"হৈটি-টৈটি" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বার্লিনের বুশ সার্কাসের মূল আকর্ষণ ‘হৈটি-টৈটি’ নামের আফ্রিকান একটি প্রকাণ্ড হাতি, যে গুনতে ও পড়তে পারে। কোনো এক কারণে হাতিটি তার ট্রেনারের ওপর রাগ করে পালিয়ে যায় এবং শহরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। পুলিশ হাতিটিকে ধরতে না পেরে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে সোভিয়েত বিজ্ঞানী ভাগনারের নাম শুনে হাতিটি শান্ত হয় এবং তাঁবুতে ফিরে আসে। হাতিটি ছিল মানুষের মস্তিষ্কের অধিকারী। মস্তিষ্কটা ছিল একজন তরুণ জার্মান বৈজ্ঞানিক রিঙের। যিনি আবিসিনিয়ায় মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মস্তিষ্কটি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন প্রফেসর তাঁর গবেষণাগারে। রিঙের সাথে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলতেন প্রফেসর। একসময় বিরক্ত হয়ে রিঙ প্রফেসরকে অনুরোধ করেছিলেন কোনো প্রাণীর দেহে তাঁকে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন প্রফেসর। সেইমতে জীবন্ত হাতির মাথায় প্রতিস্থাপনের জন্য মস্তিষ্কটি আফ্রিকার কঙ্গোতে নিয়ে যান। এবং অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর একটি হাতির মাথায় জটিল ও সফল অপারেশনের মাধ্যমে মস্তিষ্কটি প্রতিস্থাপন করেন। কিন্তু এক রাতে হাতিকে হারিয়ে ফেলে তাঁরা ভগ্ন হৃদয়ে মস্কোতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে রিঙ প্রফেসরকে জানান যে, সেই রাতে এক চিতার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে সে পথ হারায় এবং পরে একটি হাতির পালের সঙ্গে ভিড়ে। আবার একসময় পিগমিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে হস্তীদন্ত শিকারিদের খপ্পরে পড়ে। অবশেষে সেখান থেকেও পালিয়ে চলে আসে একটি খোলা মাঠে যেখানে খেলা করছিল দুটি শিশু। তারাই হাতিটিকে ‘হৈটি-টৈটি’ নাম দেয়। পরবর্তী সময়ে বুশ সার্কাস হাতির বিশেষ ক্ষমতার কথা জানতে পেরে চড়া দামে কিনে নেয়। হৈটি-টৈটি বুশ সার্কাশে খেলা দেখিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হাতিটির ‘অস্বাভাবিক’ বুদ্ধিমত্তার পিছনের সত্য কথাটি প্রফেসর ভাগনার এবং তাঁর দুই সহকারী ছাড়া আর কেউই জানত না।
আলেক্সান্দর বেলায়েভ ১৮৮৪ সালে একটি গোঁড়া পুরােহিত পরিবারে রাশিয়ায় স্মেলেনস্কে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল শেষ করে আইন কলেজে ভর্তি হন। সে সময় তার বাবা মারা যান। ১৯০৬ সালে আইনজীবী হন এবং ভাল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন এবং বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। এই সময়ে তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং ১৯১৪ সালে সাহিত্য সাধনায় মনােনিবেশ করার জন্য ওকালতি ছেড়ে দেন। ৩০ বছর বয়সে বেলায়েভ হারের ক্ষয় রােগে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ইয়াল্টায় চলে আসেন।। ১৯২২ সালে তিনি রােগমুক্ত হন এবং চাকরি খুঁজতে থাকেন। তিনি পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে একটি খণ্ডকালীন চাকরি করেন। ১৯২৩ সালে মস্কোতে আবার আইন ব্যবসা শুরু করেন। একই সাথে বেলায়েভ বিজ্ঞান কল্প উপন্যাসের লেখক হিসেবে তাঁর সাহিত্যিক কার্যকলাপ আবার শুরু করেন। ১৯২৫ সালে তাঁর প্রথম সায়েন্স ফিকশন প্রফেসর ডােয়েলের মস্তক' (Professor Dowell's Head) প্রকাশিত হয়, সঙ্গে সঙ্গেই বিখ্যাত হয়ে যান তিনি। তারপর একে একে বের হয় ‘দরিয়ার দানাে’, ‘মৎস্যকুমার’, ‘উভচর মানুষ’, ‘জাহাজ ডুবির দ্বীপ’, ‘শূন্যে ঝাপ’ প্রভৃতি জনপ্রিয় বই। বেলায়েভ ছিলেন সােভিয়েত সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃত। এজন্য তিনি রাশিয়ার জুল ভার্ন’ বলে খ্যাত ছিলেন। পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, মহাকাশ যাত্রার নানা সমস্যা নিয়ে লেখা অর্ধশতাধিক বই দিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৩৪ সালে এইচ জি ওয়েসের ইউএসএসআর সফরকালে লেনিনগ্রাদে বেলায়েভ তার সাথে দেখা করেন। জীবনের শেষ বছরগুলােতে বেলায়েভ পুশকিনের পূর্ব লেনিনগ্রাডে বাস করতেন। ১৯৪২ সালে সােভিয়েত শহর পুশকিন নাৎসিদের দখলে থাকা অবস্থায় অনাহারে মারা যান বেলায়েভ। তার কবরের সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। পুশকিন শহরে কাজানস্কো কবরস্থানে একটি স্মৃতিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।