‘১৯৭১: রক্ত, মাটি ও বীরের গদ্য’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা: মুক্তিযুদ্ধের নিরপেক্ষ ইতিহাস ও সাহিত্য সম্পর্কে অনেকের ধারণাই স্পষ্ট নয়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে রচিত ও হাতের কাছে পাওয়া পঠিত মুক্তিযুদ্ধ-সাহিত্যগুলোর অধিংকাংশই স্মৃতি-আশ্রয়ী এবং আবেগে ভরপুর। সত্যিকার বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস মাঠপর্যায় থেকে তুলে আনার চেষ্টা খুব বেশি হয়নি। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে মুক্তিযুদ্ধ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবিষয়ক গবেষক সালেক খোকনের ১৯৭১: রক্ত, মাটি ও বীরের গদ্য গ্রন্থটি। সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনের চিত্র ফুটিয়ে তোলাটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। কিন্তু সালেক খোকনের সরল গদ্যে লেখা মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারগুলো সাক্ষাৎ এক একটি ফিল্মের স্ক্রিপ্ট যেন। ছোট ছোট দৃশ্যকল্পের মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের শৈশব, কৈশোর, যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি, রণাঙ্গনের স্মৃতি, বীরত্ব, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি, বর্তমান অবস্থাসহ খুঁটিনাটি অনেক বিষয়। জাত-পাত, লিঙ্গ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান উপেক্ষা করে সাক্ষাৎকারের মানুষ হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন-একাত্তরের রণাঙ্গনে আহত ও বীরত্ব দেখানো মুক্তিযোদ্ধাদের। দলিল ও মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র নিয়ে এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হয়েছে সাব-সেক্টর কমান্ডার, বীরপ্রতীক, যুদ্ধাহত, বিএলএফ কমান্ডার, নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ সতেরোজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে লেখাগুলো। সাক্ষাৎকার পড়তে যাদের একঘেয়ে লাগে, তাদের ধারণা পাল্টাবে। সালেক খোকনের লেখাগুলো পাঠককে চুম্বকের মতো ঐতিহাসিক একাত্তরের গহিনে নিয়ে যাবে, পাঠক পাবেন একটা পুরো জীবন; যে জীবন যোদ্ধার, স্বপ্নের, ক্লান্তি, প্রাপ্তি-অপ্রাাপ্তি ও দর্শনের।
লেখক ও গবেষক। জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটা বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। তাঁর রচিত যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে ‘তরুণ কবি ও লেখক কালি ও কলম’ পুরস্কার লাভ করে। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।