বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালির বিসম জাতি সত্তার জাগরণ ঘটে । এভাবেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, ১৯০৫ সালের স্বদেশি আন্দোলন এবং ১৯৪৭-এর সংগ্রামের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিলপাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির জন্য তা এক নতুন পরাধীনতার সূচনা করে। ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা। আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের আগরতলা মামলাবিরােধী গণআন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয় । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাকিস্তান গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করেও ক্ষমতায় যেতে পারেনি। বরং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর রক্তাক্ত গণহত্যার ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম, বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় । বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু ১৯৪৮ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে, যার পরিণতি ১৯৭১-এর রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। অভ্যুদয় । ইতিহাসের এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রফেসর রফিকুল ইসলামের বইয়ের সংকলন মুক্তিযুদ্ধ-সমগ্র । মুক্তিযুদ্ধ-সমগ্র থেকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যাবে ।
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।