ঐতিহাসিকদের মতে, মুহাম্মদ সা. তাঁর জীবদ্দশায় ২৭টি মতান্তরে ২৩টি বড় ধরনের যুদ্ধ (গাজওয়া) এবং ৬০টি ছোটখাটো অভিযান (সারিয়া) পরিচালনা করেছেন। এসব যুদ্ধে মুসলিম-অমুসলিম মিলে নিহতের সংখ্যা মাত্র এক হাজার ১৮। এতগুলো ছোট-বড় যুদ্ধে নিহতের এই সংখ্যা সমকালের ইতিহাসেও নগণ্য। অথচ এর ফলে বেঁচে গেছে লাখো মানুষ। বর্বর আরবরা সভ্য হয়েছিল এসব যুদ্ধের বিনিময়ে। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল সমাজে।
একজন শহীদের রক্তের বিনিময়ে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটেছিল দৈনিক দুই হাজার ৭৪০ বর্গমাইল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুহাম্মদ সা. তাঁর বাহিনীকে আগে আক্রমণ করতে নিষেধ করতেন। যুদ্ধে নেই এমন শিশু, বৃদ্ধ, নারী— তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অস্ত্র ধারণ ছিল নিষিদ্ধ।
কাফেররা মুসলিমদের পেট চিরে কলিজা পর্যন্ত চিবিয়ে খেয়েছে। অথচ যুদ্ধবন্দিদের প্রতি সব সময়ই মানবিক ব্যবহার তাঁর সমরনীতির অত্যাবশ্যকীয় অংশ ছিল। মুহাম্মদ সা.-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় এর মধ্য দিয়ে এমন কিছু সমরনীতি বিস্ময়করভাবে ফুটে উঠেছে, যা আধুনিক সমরনেতা ও রাষ্ট্রনেতার কাছেও আজ অভাবিত ব্যুত্পত্তিময়। এসব যুদ্ধের ধরন, প্রকৃতি, ফলাফল, শিক্ষা ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পড়ুন : নবীজির যুদ্ধজীবন।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০