"রবীন্দ্রনাথের নারী-ভাবনা” বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: সারা জীবনে বহু নারীর কাছাকাছি এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি সৃষ্টিও করেছিলেন বহু নারীকে। কিন্তু এসব নারীকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন তিনি? তাঁর সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো বৈশিষ্ট্য এবং বিবর্তন লক্ষ করা যায় কি? গোলাম মুরশিদ দীর্ঘদিন মানবীবিদ্যার চর্চা করেছেন। তিনি এ গ্রন্থে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন রবীন্দ্রনাথের সেই বৈশিষ্ট্য এবং বিবর্তনের। রবীন্দ্রনাথের পিতা থাকতেন সংসার থেকে দূরে দূরে। তা সত্ত্বেও রবীন্দ্র-মানসে পিতার প্রভাব পড়েছিলো প্রবলভাবে। এতো প্রবলভাবে যে, মুরশিদ সেই রবীন্দ্রনাথকে বলেছেন ‘পিতৃগ্রস্ত রবীন্দ্রনাথ’। এই বিশেষণ কতোটা যুক্তিযুক্ত? ওদিকে, যে পিতামহের জমিদারীর ওপর নির্ভরশীল ছিলো ঠাকুর পরিবারের বিলাসিতা, বারবার লন্ডন নগরীতে গেলেও রবীন্দ্রনাথ সেই পিতামহের সমাধি দেখতে যাননি একবারও, এমন কি, নিজের অন্তহীন রচনাবলীতে পিতামহের নামও উল্লেখ করেননি। উপরন্তু তাঁর ব্যক্তিগত কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই অশ্রদ্ধার কারণ কী? রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ঠিক ছ বছর এক সপ্তাহ পরে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছিলো। রাজনীতির সেই বাত্যাপ্রবাহের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কি একবারও স্বাধীনতার দাবি করেছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন এই বইতে।
বাংলাদেশের গবেষণামূলক বই লেখকদের ক্ষেত্রে অন্যতম নাম ‘গোলাম মুরশিদ’। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তাঁর জানাশোনার পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতাও উল্লেখযোগ্য। বছরের পর বছর ধরে তিনি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ রচনা করে গেছেন, তাঁর ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ বইটিতে বাঙালি সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝে থাকি এবং যা আমাদের জানার গণ্ডির বাইরে, তার সবটাকেই এক মলাটে বাঁধাই করতে পেরেছেন তিনি। ১৯৪০ সালে বরিশালে জন্ম নেন এই গবেষক ও লেখক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়; গবেষণার ছাড়াও বেতার সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ১৯৮৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। গবেষণার মাধ্যমে অতীতকে আবিষ্কারের নেশা তাঁর প্রবল। গোলাম মুরশিদ এর বই সমগ্র পড়লে বাংলা সাহিত্যের কিছু লেখকের সমৃদ্ধ জীবনকাহিনীও জানতে পারা যায়। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা তাঁর ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’ কিংবা মাইকেল মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে লেখা ‘আশার ছলনে ভুলি’ বইগুলো এর অন্যতম উদাহরণ। নারীপ্রগতি নিয়েও তাঁর একটি বই রয়েছে- ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া’। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন বিষয়কে একটি বিশ্লেষণাত্মক ও গবেষণামূলক ইতিহাসখণ্ডে রূপ দিতে সিদ্ধহস্ত লেখক গোলাম মুরশিদ। গোলাম মুরশিদ এর বই সমূহ শুধু যে ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস নিয়েও তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এবং সে আগ্রহের ফসল হিসেবে বাংলাভাষী পাঠকসমাজ পেয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর একটি নির্দলীয় ইতিহাস’। এ বইয়ে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময় পরিক্রমার একটি বস্তুনিষ্ঠ ছবি তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন লেখক।