আল-কুর’আনের প্রজ্ঞাময় পবিত্র জীবনব্যবস্থার সাথে তার সাহিত্য-শৈলীও যে মু’জিযার অন্তর্ভুক্ত সে-কথা কতোজনই-বা জানে! বাংলাভাষায় আলঙ্কারিক কুর’আনের সাহিত্যশৈলীর উপর কাজ নেই বললেই চলে। অথচ এর উপলব্ধি কুর’আনের সাহিত্যমান, চ্যালেঞ্জ ও এর মূল্যায়ন বুঝতে বেশ জরুরী। সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র্যভাবে বিস্তৃত পরিসরে এর রচনা শুরু করেন তাঁর তাফসিরের অনন্য ভূমিকাগ্রন্থ <“আল-কুর’আনের শৈল্পিক সৌন্দর্য” বইতে। কুতুব শহী (রাহিমাহুল্লাহ) এর বইটি বড় সূচনা; এর সাথে আরো অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে যা আমাদের সামনে আসেনি। আমরা এখানে উপমা, রূপক ও বাগধারার ক্ষেত্রে আরো বিস্তৃতভাবে জানার চেষ্টা করবো ইন শাআ আল্লাহ। কুর’আনে রয়েছে বর্ণনার বিভিন্ন ঢঙ এবং আলংকারিক বিভিন্ন মাত্রাসহ উচ্চমাত্রিক সাহিত্য-অলঙ্কারের সমাবেশ। কুর’আন নাযিলের পর মুশরিকরা কেন একে পরাজিত করতে সেসময়কার সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষিত কবি-সাহিত্যিকদের পাঠাতো? তারাই-বা কেন বলতো “এ কুর’আন মানুষের পক্ষে রচনা করা অসম্ভব”, অথচ এ তো তাদেরই ভাষায় নাযিলকৃত! ফলে, তখনকার কাফির-মুশরিকরা কুর’আনের অনন্যতা ও অলঙ্কার বুঝতে পেরে যেভাবে নুইয়ে পড়তো, আজ আমরা মুসলিমরাও সেই অনন্য শক্তি ও শৈলী থেকে দূরে, বিস্মৃত। অথচ এর সৌন্দর্য, শৈলী, ঢঙ্গ, চ্যালেঞ্জ ও মূল্যায়ন আমাদেরকে কুর’আনের অমূল্যতা বুঝতে ও এর প্রতি ভালোবাসার তীব্রতা জাগাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে। কুর’আনের অলঙ্কারের এই উপমা-বাগধারার অভ্রভেদী বয়ান ও সেই বর্ণনায় বর্ণিত অনন্য শৈলীর হেদায়াত সরলভাবে বর্ণিত হয়েছে উস্তাদ নোমান আলী খানের সংকলন গ্রন্থ “উপমার শৈল্পিকতায় মুগ্ধময় কুর’আন” বইটিতে। এসব উপমা মুমিনদের প্রাণে দেয় দৃঢ়তা আর অলঙ্কারের নিশ্ছেদ্র শক্তি অবিশ্বাসীদের অন্ধ বিশ্বাসকে করে ভঙ্গুর।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক এবং ইসলামি বক্তা নোমান আলী খান এর বই সমূহ ধর্মীয় যুক্তিতর্কের জন্য মুসলিমদের নিকট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার ‘ডিভাইন স্পিচ: এক্সপ্লোরিং কুরআন অ্যাজ লিটারেচার’ বইটি মুসলিম বিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলা একটি বই। এ বই তাকে লেখক এবং ধর্মীয় যুক্তিবিদ হিসেবেও খ্যাতি এনে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর অ্যারাবিক অ্যান্ড কুর'আনিক স্টাডিজ’ এর সিইও এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকান মুসলিদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এ বক্তা তার ইসলামিক জ্ঞান এবং যুক্তি-তর্কের দ্বারা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের জীবনীভিত্তিক ‘দ্য ফাইভ হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ এর তৃতীয় সংস্করণে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। নোমান আলী খান ১৯৭৮ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সেসময় পাকিস্তানি কূটনীতিক হিসেবে জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মা উভয়েই পাকিস্তানি হলেও নোমানের পাকিস্তানে বেশি দিন থাকা হয়নি। বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের কল্যাণে সৌদি আরবে ৬ বছর বসবাস করার পর আমেরিকায় চলে আসেন নোমান। এরপর থেকে আমেরিকাতেই থাকছেন এই ধর্মীয় বক্তা। ধর্মীয় শিক্ষায় তার হাতেখড়ি হয়েছিল সৌদি আরবেই। এরপর আমেরিকাতেই তিনি চালিয়ে গেছেন ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষা। বর্তমানে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে বসবাস করছেন তিনি। নোমান আলী খান বাংলা বই লেখেননি, তথাপি তার ‘ডিভাইন স্পিচ’ এবং ‘রিভাইভ ইয়োর হার্ট’ সহ বেশ কিছু বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও, ‘প্রশান্তির খোঁজে’ এবং ‘বন্ধন’ বইগুলোও রয়েছে নোমান আলী খান এর বই সমগ্রতে।