"অভিভাষণ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের গৌরবদীপ্ত জীবনের অবসানে ঊনবিংশ শতাব্দীর সহিত বাঙালির শেষ যােগসূত্র ছিন্ন হইল। পরিণত বয়সে তাঁহার পরলােকগমনে শােকের কারণ নাই কিন্তু এই একটি জীবনদীপ নির্বাণে বাঙলার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর, শিক্ষাব্রতী, সমাজসেবী, দেশপ্রেমিকের তিরােধান ঘটিল। দেশের এ ক্ষতি পূরণ হইবার নয়। আচার্যদেবের পুণ্য জীবন মহামানবের প্রতি অসীম করুণাবারি অকাতরে বর্ষণ করিয়াছে, মিতব্যয়ী বিলাস বাহুল্যবর্জিত সরল জীবন যাত্রার নামমাত্র প্রয়ােজন মিটাইয়া তাহার অর্জিত সকল অর্থ পরহিতব্রতে অর্পিত হইয়াছে। ১৫ বৎসর কলিকাতা বিজ্ঞান কলেজে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে রসায়নের অধ্যাপকের কাজ করিয়াছেন। তাঁহার বেতনের সমুদয় অর্থ সঞ্চিত হইয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যই এই অর্থ ব্যয়িত হইতেছে। ইহা ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনাথাশ্রম, দরিদ্র ছাত্র এবং অসহায় নারী ও শিশু যে তাঁহার প্রদত্ত অর্থে উপকৃত হইয়াছে তাহার ইয়ত্তা নাই। ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রে তাঁহার গবেষণা অতুলনীয়। তাঁহার হিন্দু রসায়নের ইতিহাস এবং ‘রসার্নবম গ্রন্থদ্বয় প্রগাঢ় মনীষা ও সংস্কৃতে পাণ্ডিত্যের পরিচয় বহন করিতেছে। সমাজ সংস্কার আন্দোলনে তিনি যৌবনেই যােগদান করেন। এ বিষয়ে ব্রাহ্ম সমাজের কার্যে তিনি আকৃষ্ট হন এবং ক্রমে ব্রাহ্ম আন্দোলনে আত্মনিয়ােগ করেন। শেষ জীবনে। তিনি সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি পদে বৃত হইয়াছিলেন। এদেশে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়ােগেও তিনিই পথ প্রদর্শক।