-‘আমি পাঁচটা খুনের কথা বলতে এসেছি।’ মেয়েটি হাসল। তার হাসি ভারি সুন্দর। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল-‘আমি কিন্তু মানুষের মনের কথা বলে দিতে পারি।’ -‘কী রকম?’ -‘মানে, কে কী ভাবছে তা আমি বুঝতে পারি।’ -‘থট রিডার?’ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে প্রশ্ন করলাম। বুজরুকি তো আর কম দেখলাম না জীবনে। -‘বিশ্বাস করছেন না তো? আচ্ছা, মিলিয়ে নিন। আমাকে দেখার পর আপনার মনে হয়েছিল, এমন সুন্দরী মেয়েকে এতক্ষণ রিসিপশনে বসিয়ে রাখা ঠিক হয় নি। আরেকটি আপত্তিকর কথাও অবশ্য আপনি ভেবেছেন, তবে তা বলতে চাইছি না।’ আমি হতভম্ব। এতটা নির্ভুল...কীভাবে সম্ভব! তখনো আমি জানতাম না, এই মেয়ে ভবিষ্যতে আমাকে কত জটিল পরিস্থিতির মুখে ফেলবে। তার কারণে ওলটপালট হয়ে যাবে কত কিছু।
... একটু পর সে বলল- 'আপনার একটা হেল্প দরকার আমাদের।’ -‘কী হেল্প? আর আপনারা কারা?’ -‘আমরা...মনে করুন কয়েকজন ভুক্তভোগী।’ -‘কী ব্যাপার বলুন তো, এর মধ্যে আবার মনে করাকরির কী আছে? এটা কি বীজগণিতের ক্লাস, ধরি এক্স ইজ ইকোয়াল টু ওয়ান।’ -‘স্যরি, আমি বোধহয় গুছিয়ে বলতে পারছি না। আসলে আপনি এমন রাগী রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন যে আমার কথা সব গুলিয়ে যাচ্ছে। একটু ইজি হবেন প্লিজ।’ শেষ বাক্যে স্পষ্ট অনুনয়। আমি ‘ইজি’ হওয়ার চেষ্টা করে বললাম-‘ঠিক আছে বলুন। আচ্ছা, কী যেন নাম বলেছিলেন আপনার?’ -‘নাম তো এখনও বলিনি।’ -‘ও।’ -‘আমার নাম আকলিমা আক্তার।’ আমি একটা ধাক্কা খেলাম। আঁটসাঁট পোশাক আর হিলজুতো পরা আধুনিকার সঙ্গে নামটা যেন ঠিক যায় না। সে যাই হোক, তবে আমি তার পরের বাক্যের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। -‘আমি পাঁচটা খুনের কথা বলতে এসেছি।’ নির্বিকারভাবে বলল আকলিমা। -‘খুন? তাও পাঁচটা?’ -‘হ্যাঁ। বেশিও হতে পারে। আপনি এত ঘাবড়াচ্ছেন কেন? আপনি না ক্রাইম রিপোর্টার, আপনারা তো প্রতিদিনই পত্রিকায় এসব লেখেন।’
এভাবেই শুরু হয়েছে ইন্দ্রজিৎ সরকারের ভিন্নধর্মী উপন্যাস 'খুন করার পর তাকে ভালোবেসে ফেলি'। রহস্য-রোমাঞ্চ, গোয়েন্দাগিরি আর অন্যরকম প্রেমের পথ ধরে এগিয়েছে রুদ্ধশ্বাস এক কাহিনি। এটুকু বলা যায়, উপন্যাসের শেষে নিশ্চিতভাবেই পাঠকের জন্য অপেক্ষা করছে দারুণ বিস্ময়!
উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। পেশায় সাংবাদিক। লেখালেখি তার নেশা । এক দশক ধরে মূলত গল্প-উপন্যাস লিখলেও একসময় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কবিতা লিখেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন ছড়াও। তার ঝরঝরে গদ্যভাষা আর টানটান কাহিনিবিন্যাস পাঠককে নিবিষ্টচিত্ত করে রাখে।আপ্লুত করে অন্যতর ভালোলাগায়।