হালকা মিষ্টি একটা গন্ধ আসে নিঝরের নাকে। তাতিয়ানার গায়ের এই গন্ধটা নিঝরের কাছে বেশ পরিচিত। নিঝর কোনাে কথা বলতে পারে না। তার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে। তার কলিজাটা মােচড় দিয়ে ওঠে। দিনের পর দিন দুশ্চিন্তায় থাকা ক্লান্ত-অবসন্ন হয়ে পড়া নিঝর ফিসফিসিয়ে তাতিয়ানাকে প্রশ্ন করে—এতদিন কোথায় ছিলে, তাতিয়ানা? কতকাল তােমায় দেখি না! তাতিয়ানা এবার বাম হাত দিয়ে চশমা খুলে। তাতিয়ানার চশমার অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা টানাটানা মায়াবী চোখ দুটি বের হয়ে আসে। তার দৃষ্টিপাত নিঝরের কাছে জাদুর মতাে ঠেকে। তাতিয়ানা আর নিঝরের মাথার উপর তখন নরম রােদের ছোঁয়া। নিঝরের চোখের ফোকাস এখন একটা তাতিয়ানা। তার মনটা বেশ শান্ত হয়। প্রসন্ন চিত্তে নিঝর তাতিয়ানাকে দেখে। কিন্তু তাতিয়ানা যেনও নিঝরের আবেশে আটকাতে চায়না। তাতিয়ানার ডান হাতে একটা লাল রঙের ভ্যানিটি ব্যাগ। সে ব্যাগে চশমা রেখে টিসু বের করে। এরপর টিসু দিয়ে নিঝরের অশ্রু মুছে। নিঝর প্রখর রােদ্রে শুকিয়ে যাওয়া গুলাের মতাে নেতিয়ে পড়ে তাতিয়ানার দিকে। এবার তাতিয়ানা নিঝরকে জড়িয়ে ধরে। তাতিয়ানার চোখ বেয়ে গরম জল ঝরে পড়ে নিঝরের ঘাড়ে। দুজনের কেউ কোনাে কথা বলে না। বাস টার্মিনালের লােকজন অবাক হয়ে যায়। ইতালির দুধসাদা এমন এক মেয়ে তামাটে লােকটির ভেতরে কী এমন পেলাে! হয়তাে এমনটিও ভাবছে কেউ কেউ। লােকজন যাচ্ছে আর তাদের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষন দুজন দুজনকে ধরে রাখে। এরপর তারা সামনে হাঁটতে থাকে। গাড়ির কাছে গিয়ে তাতিয়ানা নিঝরকে জড়িয়ে ধরে। এরপর নিঝরকে চুমু দেয়। নিঝরকে এই প্রথম চুমু খায় তাতিয়ানা। তাতিয়ানার রক্ত জবার মতাে টকটকে লাল ঠোটের চুমু খেয়ে বােকা, লাজুক, হাঁদারাম স্বভাবের নিঝরের মাথা কেমন ভোঁ-ভোঁ করে ঘুরে ওঠে...
লেখার আলো জ্বেলে তিনি নানান ঢঙে পাঠকদের নিয়ে যান জীবনের চৌকাঠে। শোনান হরেক রকম গল্প। তিনি স্বপ্নবাজ এক তরুণ। তাঁর লেখার বৈচিত্র্যের কারণে এরই মধ্যে তিনি পাঠকনন্দিত হয়েছেন। ধূপছায়া গল্পগ্রন্থের জন্য তিনি ২০১৬ সালে তরুণ শাখায় পেয়েছেন দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার। আলোর পথে তাঁর নিরন্তর ছুটে চলা। তিনি মানুষকে ভালোবাসেন। মানুষের কথা বলতে ও লিখতে আনন্দ পান। পছন্দ করেন ঘুরতে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে তার ঢের আগ্রহ। ঘুরেছেন বারোটি দেশ। জীবনের গ্লানি মুছে মানুষকে স্বপ্নের গল্প শোনানো তাঁর নেশা। তিনি এপর্যন্ত পনরোটি বই লিখেছেন। গল্প, উপন্যাস,কবিতা, শিশুসাহিত্য আর অনুবাদে তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর উপন্যাস মহাদেশ-মহাকাল পাঠকদেরকে দিয়েছে ভিন্ন কন্টেন্টের সান্নিধ্য। শুধু লেখালেখি নয়, তিনি বেশ সফল তাঁর পেশাজীবনেও। বস্ত্রপ্রকৌশলের ওপর তিনি স্নাতকোত্তর করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই বিষয়ে স্নাতক করেছেন পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। একমাত্র ছেলে সাজিদ আর স্ত্রী পুষ্টিবিদ তামান্নাকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। নিয়মিত লেখে যাচ্ছেন বিভিন্ন জাতীয় ও সাহিত্য পত্রিকায়।