ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় ধর্মীয় স্থাপত্য নিয়ে তথ্যপূর্ণ তেমন কোন গ্রন্থ নেই। তখনই মনে হয়েছিল যে, ধর্মীয় ইতিহাস স্থাপত্য নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার একটি তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ লিখবো। কুষ্টিয়ার ইতিহাস গ্রন্থে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি কুষ্টিয়া জেলার ধর্মীয় স্থাপনার দিক থেকেও অনেক সমৃদ্ধ। হাজার বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ জনপদের বিচিত্র জনগোষ্ঠীর সুখ-দু:খ আনন্দ-বেদনা নিয়ে রচিত এক বর্ণাঢ্য ধর্মীয় কৃষ্টির ইতিহাস। বাঙালি সমাজ বহু ভাগে বিভক্ত- তার সবচেয়ে বড় দুটি শরিক হিন্দু আর মুসলমান। ঐতিহাসিকরা হয় হিন্দু বাঙালিদের ইতিহাস লিখেছেন, নয়তো লিখেছেন মুসলমান বাঙালির ইতিহাস- সমগ্র বাঙালির নয়। মানুষের ধর্মীয় পরিচয় এতো প্রবল যে, নিরপেক্ষ ইতিহাস লেখাও সহজ নয়। যে মুষ্টিমেয় লোক সত্যি সত্যি অসাম্প্রদায়িক, তাঁদের কেউ কেউ আবার অন্য সম্প্রদায় সম্পর্কে জানলেও, যথেষ্ঠ ভালো করে জানেন না। ফলে খন্ডিত ইতিহাস খন্ডিতই থেকে যায়। কতটা অসচেতন আমরা, যারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাই না; ভুলে যাচ্ছি নিজেদের ইতিহাস; নিশ্চিন্তে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার প্রবণতার মধ্যে জীবনের সাফল্য খুঁজে ফিরছি। আমরা এও বুঝিনা কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাসকে গ্রাস করছে ভিনদেশী সংস্কৃতি আর মিথ্যা ইতিহাস। আমরা নির্বিকার, যেন একাজটা নেহায়েতই অপরের, আমাদের নয় মোটেও।
‘ধর্মীয় ইতিহাস স্থাপত্যে কুষ্টিয়া’ রচনায় তথ্য সংগ্রহের কাজটি ছিল অত্যন্ত দুরূহ। পুরাতন মূল্যবান গ্রন্থসমূহ প্রায় সবই দুষ্প্রাপ্য। নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদেরকে। বহুদিন ধরে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি যাতে গ্রন্থটি গবেষণাধর্মী হয়। আজ আমাদের একমাত্র সান্তনা শেষ পর্যন্ত গ্রন্থখানি প্রকাশ করতে পেরেছি। ‘ধর্মীয় ইতিহাস স্থাপত্যে কুষ্টিয়া’ গ্রন্থটি জাতীয় ইতিহাসে কতখানি অবদান রাখতে সক্ষম হবে তা আমার জানা নেই। ভাল মন্দ বিচারের ভার পাঠকের উপর। আমরা নতুন প্রজন্ম, লেখায় তথ্য ও বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ও সম্মানিত পাঠকগণ অনুগ্রহপূর্বক জানালে কৃতজ্ঞতার সাথে গৃহিত হবে এবং পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করার চেষ্টা থাকবে। যে সকল লেখকের বই থেকে বিনা অনুমতিতে তথ্য ঋণ করেছি তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
১৯৭৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অধ্যক্ষ মুহম্মদ আমজাদ হোসেন, সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। মাতা মিসেস আম্বিয়া হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষিকা, কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। ড. হাসনায়েন বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, লালন একাডেমি, বন্ধু সংগঠন ব্যাচ ’৮৮ কুষ্টিয়ার জীবনসদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। প্রকাশনা সংস্থা কণ্ঠধ্বনি-র স্বত্বাধিকার। কবে কখন কোনো জিনিসের আরম্ভ কী করে হয়- তা বলা কঠিন। সেই আরম্ভকালটি রহস্যে আবৃত থাকে। কিন্তু মন হঠাৎ কেন বিদ্রোহী হয়ে কর্মজগত থেকে ভাবজগতে প্রবেশ করেছে, আজ আর তা সঠিক বলতে পারবো না। শুধু অস্পষ্ট মনে পড়ে, ছন্দ মেলাবার আনন্দ-প্রয়াসে লিপ্ত আমাদের শৈশবের দিনলিপি। ভবিষ্যতে লেখালেখি হবে আমাদের জীবনের প্রধান আরাধ্য, তা আগে কখনো বুঝতে পারিনি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের শেকড় খুঁড়তে গিয়ে আমার একান্ত ইচ্ছা জেগেছে, আমার শেষ জীবন কাটুক কুষ্টিয়া জেলার নিভৃত পল্লীতে; যেখানে মানবতা, মানবপ্রেম, শ্রদ্ধা, কোমল হদয়ের ভালোবাসা, মাটির গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করে যাবে অবিরাম।...