"মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া : গৌরবের ৫০ বছর" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন গৌরবােজ্জ্বল, তেমনি তার ক্যানভাস অত্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের উদয়গিরি ও হার না মানা রণাঙ্গন কুষ্টিয়া। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না থাকার কারণেই জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তথ্য সমৃদ্ধ হতে পারেনি | কেননা আঞ্চলিক ইতিহাসই জাতীয় ইতিহাস রচনার ভিত্তি। মুক্তিযুদ্ধে দুটি দিক দেখা যায়। একদিকে মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্বগাথা ইতিহাস, অপরদিকে স্বাধীনতা বিরােধী শক্তির জঘন্য অপরাধের কার্যকলাপ। স্বাধীনতা বিরােধী শক্তি, একাত্তরের ঘাতক ও পাকহানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের উপস্থিতি রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রকটভাবে রয়েছে। প্রতিটা অগণতান্ত্রিক সরকার চেয়েছে এই চেতনা গােটা জাতির স্মৃতি থেকে দ্রুত অবলুপ্ত হােক। আর এসব ঘাতকরা খােলা ময়দান ও পত্রিকায় সদম্ভে ঘােষণাও করে যে একাত্তরে আমরা ভুল করিনি’! তখন কোন প্রতিবাদ হয় না। কারন নতুন প্রজন্ম অতীত জানে না বলেই কোন প্রতিবাদ হয় না। আমাদের কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের অতীত স্মৃতির দুরন্ত সাহসী কথামালা নতুন এবং আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার বাসনায় গ্রন্থখানির প্রকাশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস রচনা কোনাে একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাজ নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধরে রাখতে হলে , নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রচার-প্রকাশ করা আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের গুরুদায়িত্ব। শুধু রাষ্ট্রের ওপর দায়িত্ব না চাপিয়ে ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিকভাবে আমাদেরও অনেক কাজ করার দায়বদ্ধতা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গােটা জাতির পরম অর্জন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়ােজন বহুমাত্রিক ও ব্যাপক পরিসরে গবেষণা। সে প্রচেষ্টারই এক ক্ষুদ্র প্রয়াস এই গ্রন্থ 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া'। আঞ্চলিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিপুষ্ট এই গ্রন্থটি ইতিহাসপ্রেমী পাঠকদের কুষ্টিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাবে, ইতিহাসের চমকপ্রদ ও রােমাঞ্চকর উপাদানের সন্ধান দেবে আর সঞ্চার করবে মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনের জীবন্ত হৃৎস্পন্দন, বাড়িয়ে দিবে মুক্তিযুদ্ধকে জানার উৎসাহ ও আগ্রহ। মুক্তির লড়াইয়ে আমাদের বিজয়ের পেছনে ছিলাে সম্মুখ যুদ্ধে বহু মুক্তিযােদ্ধার সাহসিকতাপূর্ণ অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ। তাই রাষ্ট্রও সেই সােনার সন্তানদের বরণ করে নিয়েছিলাে বীরত্বসূচক খেতাব দিয়ে। কিন্তু যে বীর মুক্তিযােদ্ধাদের ত্যাগ ছাড়া এ দেশ কখনাে স্বাধীন হতাে না, তাদের অনেকেই এখনাে রয়ে গেছেন লােকচক্ষুর অন্তরালে। তাদের অনেকেরই বীরত্বগাথা পরিচয় আমাদের অজ্ঞাত, অসীম আত্মত্যাগ আমাদের অজানা। কুষ্টিয়ার মুক্তিযােদ্ধাদের কথা বিস্মৃতির গহবর থেকে বের করে এনে ভবিষ্যতে সংরক্ষণের বিনীত প্রচেষ্টা হিসেবে প্রকাশিত হলাে গ্রন্থটি। এই গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে কুষ্টিয়ার মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্ব ও গৌরবের কথা, তেমনি শােক ও বেদনার কথা।
১৯৭৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অধ্যক্ষ মুহম্মদ আমজাদ হোসেন, সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। মাতা মিসেস আম্বিয়া হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষিকা, কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। ড. হাসনায়েন বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, লালন একাডেমি, বন্ধু সংগঠন ব্যাচ ’৮৮ কুষ্টিয়ার জীবনসদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। প্রকাশনা সংস্থা কণ্ঠধ্বনি-র স্বত্বাধিকার। কবে কখন কোনো জিনিসের আরম্ভ কী করে হয়- তা বলা কঠিন। সেই আরম্ভকালটি রহস্যে আবৃত থাকে। কিন্তু মন হঠাৎ কেন বিদ্রোহী হয়ে কর্মজগত থেকে ভাবজগতে প্রবেশ করেছে, আজ আর তা সঠিক বলতে পারবো না। শুধু অস্পষ্ট মনে পড়ে, ছন্দ মেলাবার আনন্দ-প্রয়াসে লিপ্ত আমাদের শৈশবের দিনলিপি। ভবিষ্যতে লেখালেখি হবে আমাদের জীবনের প্রধান আরাধ্য, তা আগে কখনো বুঝতে পারিনি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের শেকড় খুঁড়তে গিয়ে আমার একান্ত ইচ্ছা জেগেছে, আমার শেষ জীবন কাটুক কুষ্টিয়া জেলার নিভৃত পল্লীতে; যেখানে মানবতা, মানবপ্রেম, শ্রদ্ধা, কোমল হদয়ের ভালোবাসা, মাটির গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করে যাবে অবিরাম।...