‘আমার দ্বিতীয় সত্তা ও ইলোরা, বইয়ের কিছু কথাঃ সিরাজুন নাহার সাথী কবি এবং কথাশিল্পী। তিনি প্রথাবিরোধী নন। তবে প্রচলিত প্রথাবন্ধও নন। প্রথার বাইরে যে অনায়াস জীবনবোধ, যে জীবনে ইচ্ছেগুলো মুক্তধারার মতো, সেখানেই তার বারংবার পদপাদ। লিখছেন সেই 80’র দশক থেকে। এক আনন্দময় লেখক জীবনের সান্নিধ্যে ক্রমে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতাকে ঋদ্ধ করেছেন। তাঁর লেখার অনুসঙ্গ অনিবার্যভাবেই প্রেম এবং এর সাথে সূতাবদ্ধ সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, সহিষ্ণুতা ও অপারগতা। এক কথায় পুরো সমাজক্রিয়ার সীমা এবং সীমা অতিক্রমণের আহাজারী বা আত্মতুষ্টি। কবিতা দিয়েই তাঁর যাত্রারম্ভ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ- ‘কবিতার মতেহা চোখ’। তারপর ক্রমান্নয়ে বিষণ্ন বেদনায়। কথাগ্রন্থ- এই হৃদয়ে শুধু তুমি, প্রিয়ার চোখে শ্রাবণধারা, মেঘে ঢাকা মন, নান্দনিক অশ্রু। সবশেষে আবারও কবিতায় ফেরা এবং প্রিয়দর্শিনী। এবার তিনি স্পর্শ করতে চাইছেন তাঁর ভেতরের তিনিকে। যিনি সুন্দরের প্রার্থনা করেন। যাঁর কাছে কদর্য কামনা নয়, অধরাই আরাধ্য। তাই তিনি সুন্দরের ভেতরের রক্তাক্ত হাহাকারকে নির্মাণ করেন আর্দ্র মমতায়। তিনি খুবই সফল এ জটিল ক্রিয়ায় উপন্যাসটি পড়লেই ইলোরর জন্য এক সীমাহীন মায়া পাঠকের মনকে স্পর্শ করবে। একজন নারী কিভাবে তাঁর সৌন্দর্য, তাঁর সৃষ্টিশীলতা নিয়ে দাঁড়াবেন এবং হেঁটে যাবেন ছায়াকে অতিক্রম করে, তার একটা অনুচ্চ নির্দেশনা হয়তো লেখক দিয়েছেন, যা পাঠককে আশাবাদী করবে, করবে নতুন জীবন ভাবনায় আগ্রহী। এ গ্রন্থের বহুল পাঠকপ্রিয়তা, এ ধরনের ভিন্ন জীবন ভাবনাকে উৎসাহ যোগাবে। লেখক পরিচিতিঃ সিরাজুন নাহার সাথী একাধারে কবি ও কথাকার। কবিতায় তিনি রোমান্টিক বটে কিন্তু উপন্যাসে যথেষ্ট জীবনবাদী। অবশ্য তা ভিন্নধর্মী। সংসারের চৌহদ্দি তাঁর বিচরণক্ষেত্র সীমায়িত করলেও উপলব্ধির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। দূর থেকেই দেখতে পেয়েছেন জীবনের অন্ধি সন্ধি। আর তাই তাঁর পক্ষে একাধিক কাব্য রচনা করা যেমন সম্ভব হয়েছে, তেমনি একাধিক উপন্যাস লেখাও হয়েছে সহজসাধ্য। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিরাজুন নাহার সাথী নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছেন রাজশাহীতে। এই দুই জনপদের জীবন তাঁর ভাবনায় যেভাবে ধরা পড়েছে সেভাবেই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর লেখায়- কবিতা এবং উপন্যাসে। সাহিত্যের দু’টো মাধ্যমেই স্বচ্ছন্দ বিচরণশীল হলেও হালে উপন্যাসেই তিনি পাঠকপ্রিয় হয়েছেন। যে বিশেষ গুণে তিনি গুণাম্বিত তাহলো পুরুষের প্রতি নারীর যে স্বাভাবিক আকর্ষণ সে বিষয়ে তিনি অনেকটাই নিস্পৃহ। নারী হলেও নারীর প্রতিই তাঁর মমত্ববোধ বেশি এবং তা তাঁর প্রায় সব লেখাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উপন্যাসও তার ব্যতিক্রম নয়। আশা করি আগের উপন্যাসগুলোর মতোই তাঁর ‘আমার দ্বিতীয় সত্তা ও ইলোরা’ অধিক পাঠকপ্রিয়তা পাবে এবং সাথী সাহিত্য গজতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন। তছাড়া নানা বাধা-বিঘ্নকে অস্বীকার করেও তিনি যে অব্যাহত গতিতে লিখে যাচ্ছেন তা সবার ক্ষেত্রে সহজ নয়। এদিক থেকেও তিনি বিশেষ বৈশিষ্টের অধিকারী সে কথা মানতেই হয়। ফজলুল হক সভাপতি রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ।