মাঝরাতে সামিনের হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। সে বিস্মিত হয়ে দেখল তার পড়ার টেবিলে রাখা বায়ােটপটা (অত্যাধুনিক কম্পিউটার) আপনা-আপনি চালু হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে ধীরে বের হয়ে আসছে উজ্জ্বল নীল একটা আলাে। সামিন বায়ােটপের সামনে আসতে স্ক্রিনে বিশ-একুশ বছরের অদ্ভুত সুন্দর একটি মেয়ের অবয়ব ভেসে উঠল। সামিন কথা বলতে মেয়েটি জানাল, তার নাম রিরি, সে গিলিনিহা গ্রহ থেকে এসেছে এবং পৃথিবী থেকে যুদ্ধবিগ্রহ দূর করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সামিন কয়েকদিনেই বুঝে গেল কী অবিশ্বাস্য ক্ষমতার অধিকারী রিরি! | রিরি যে শুধু আলাে আর শব্দের মধ্য দিয়ে চলতে পারে তা নয়, সে ভবিষ্যৎ বলতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে সময়কে আটকে রাখতে পারে, এমনকি বর্তমান সময়ে পরিবর্তন এনে ভবিষ্যৎকে নিজের মতাে সাজাতেও পারে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে রিরি সামিনকে তাদের স্পেসশিপে আসার আমন্ত্রণ জানায়। সামিন রাজিও হয়। রিরিদের স্পেসশিপে সামিনের সাথে আরও একজন আমন্ত্রিত হয়। তার নাম নােভা। কিশাের সামিন এবং কিশােরী নােভা দুজনে ভিনগ্রহের অতি উন্নত প্রাণীর স্পেসশিপ ভ্রমণের এমন দুর্লভ সুযােগ পেয়ে সত্যি আনন্দিত। তাদের এই ভ্রমণের আয়ােজন সর্বোচ্চ গােপনীয়তার সাথে করা হয়েছে। তারা দুজন ছাড়া আর কেউ জানে। যে তারা ভিনগ্রহের প্রাণীর স্পেসশিপে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আসলে কী ঘটেছিল সামিন আর নােভার জীবনে? সত্যি কি তারা রিরির মতাে অতি উন্নতবুদ্ধির প্রাণীর সহায়তায় পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল? নাকি নিজেরাই হারিয়ে গিয়েছিল গিলিনিহা গ্রহের রহস্যময় প্রাণী রিরির নির্মম শিকার হয়ে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।