জেলখানা বা কারাগারে বসে বই লেখার রেওয়াজ আমাদের দেশে এখনও তেমন গড়ে ওঠেনি। জেলখানার বাসিন্দা মাত্রই অহর্নিশ চিন্তা থাকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং সে লক্ষে তার মন থাকে সদা উচাটন- সেখানে তার পক্ষে দেশমাতৃকার জন্য ভাবনা, সৃজনশীল চর্চা, বইপড়া বা লেখালেখি করা- সে তো ‘দিল্লী হনুজ দূর-অস্ত’ অর্থাৎ মনস্তাত্তি¡কভাবে সেটা যে কোন মানুষের পক্ষে অসম্ভব একটি ব্যাপার। সেই অসম্ভবকে জয় করতে জানেন কেবল স্বাপ্নিকেরাই। দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু আমাদের দেশের তেমনই একজন মহান স্বাপ্নিক ও রাজনীতিবিদ, যিনি এ দেশের আপামর সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রগতি, শিক্ষা, সাম্য, সুনীতি, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর যে সংগ্রাম ও ত্যাগ, সেটা আমাদের অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের কথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। শুধুমাত্র ভিন্নমত পোষণের অজুহাতে অজস্র্র মামলায় জড়িয়ে তাঁকে যেভাবে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানো হয়, তা এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিচারহীনতার একটি নৈরাজ্যিক দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে। ‘আমার জেল আমার ঘর’ দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর লেখা প্রথম বই। এতে তিনি তাঁর প্রথম জেলজীবনের ১৮ দিনের অনুপুঙ্খ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিক হিসেবে সম্পূর্ণ নির্মোহ দৃষ্টিতে জেল এবং জেলজীবন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় আশয় এতে তিনি সন্নিবেশ করেছেন। বইটির শেষে যুক্ত ‘সচিত্র সাক্ষ্য’ পর্বটি লেখকের আপোসহীন সংগ্রামী সত্তাকে আরও বেশি প্রামাণিকতা দিয়েছে। বইটি পাঠ করলে অন্বেষীজন মাত্রই আপন উপলব্ধির কোষে সিন্ধু সেঁচে মুক্তো আহরণের আস্বাদ পাবেন- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।