লেখকের কাজ তো অবিরাম পথ-চলা। পথ চলার অপ্রাপ্তির বেদনাটুকু, দীর্ঘশ্বাসের মতো আড়ালে থাকা সময়, জয়-পরাজয়, ভালোবাসা বা বঞ্চনা, স্বপ্ন, সম্ভাবনা তার সঙ্গী হয়। সেই সঙ্গ থেকেই দেওয়ান সালাউদ্দিনের ‘জেল জীবনের কথা’। লেখকের আকাঙ্খা থাকে তার লেখনী শেষ হবার পরও তার রেশটুকু অনুরণিত হবে পাঠকের মনে। মূর্ছনা ধরে রাখার জন্য সেতারে ৯ থেকে ১৩টি তার থাকে। আমাদেরও আকাঙ্খা দেওয়ান সালাউদ্দিনের বইয়ের বর্ণনার তারে বহুবিস্তারী এক কথককে সুরের মূর্ছনায় আরও গভীর করে পাওয়ার। প্রগতি, শিক্ষা, সাম্য, সুনীতি, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর যে সংগ্রাম ও ত্যাগ, সেটা আমাদের অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের কথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। শুধুমাত্র ভিন্নমত পোষণের অজুহাতে অজস্র্র মামলায় জড়িয়ে তাঁকে যেভাবে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানো হয়, তা এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিচারহীনতার একটি নৈরাজ্যিক দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে। ‘জেলজীবনের কথা’ বইটিতে তিনি তাঁর দ্বিতীয়বার জেলজীবনের ১০৮ দিনের অনুপুক্সখ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিক হিসেবে সম্পূর্ণ নির্মোহ দৃষ্টিতে জেল এবং জেলজীবন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় আশয় এতে তিনি সন্নিবেশ করেছেন। বইটির শেষে যুক্ত ‘সচিত্র সাক্ষ্য’ পর্বটি লেখকের আপোসহীন সংগ্রামী সত্তাকে আরও বেশি প্রামাণিকতা দিয়েছে। বইটি পাঠ করলে অন্বেষীজন মাত্রই আপন উপলব্ধির কোষে সিন্ধু সেঁচে মুক্তো আহরণের আস্বাদ পাবেন- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।