প্রতিনিয়ত যাকে আমরা যাপন করি, যে জীবনকে, তাকে প্রায়শই চিনি না, বা হয়ত চিনি ওই না-চেনার মতো একটু; তাকে চিনিয়ে দেয়ার দায়িত্বটা অকারণেই যে নিয়েছে তার নাম সাহিত্য। তবে আবার চিনিয়ে দেয়ার রকমফের আছে, কোনো বাঁধা ছক নেই, তাই আমরা জগতব্যাপী বিভিন্ন লেখকের কাছে জীবনটাই বিভিন্ন রকমে চিনি যেহেতু জীবন অশেষ-নিরবধি, নইলে তো একজন দুজন লেখক দিয়েই আমাদের বেশ চ’লে যেত-তা যায় না। এখন বলার কথা এই যে মোস্তাফিজ কারিগর জীবন চেনাবার নিজস্ব রীতি, তাঁর এই তাজা তারুণ্যের কালেই, এমন রপ্ত করেছেন যে তাঁর কাছে আমাদের যেতেই হবে : কেরু এন্ড কোং তারই একটি প্রমাণ। গল্পগ্রন্থটির একটি অন্তর্লীন নাম, বলা যেতে পারে, ‘আমি’ বা ‘আমিগুলি’-কারণ প্রতিটি গল্পের ভেতরে আমরা প্রত্যেকে যার যার আমিটিকে দেখতে পাব বা আমরা সকলে মিলে দেখতে পাব আমাদের সমবেত আমিগুলি-শুধু দেখাবার দুর্মর গুণে আমাদের আধুনিকতা-নাগরিকতাবন্দী অস্তিত্বকে আমরা নতুন ক’রে দেখি, যেন প্রথম বারের মতো। যে-কথাটা বলতেই হবে: সৃষ্টিকর্তা হিশেবে মোস্তাফিজ কারিগর বিচিত্রমুখী-তিনি চিত্রকর, তিনি কবি, তিনি কথাসাহিত্যিক; কিন্তু যেমন তাঁর কবিতা চিত্রকরের কবিতা নয়, কবিরই কবিতা, তেমনি তাঁর গদ্য কবির গদ্য নয়, একজন অভিনিবিষ্ট গদ্যকারেরই গদ্য যা গ’ড়ে উঠেছে কবিতার কাছ থেকে পাওয়া অটল পরিমিতি, সূক্ষ্মতা, সৌন্দর্য এবং একজন কথাসাহিত্যিকের শাণিত সমাজ-বীক্ষণের যথাযথ মিশ্রণে। মাধ্যমটি যেহেতু ভাষা, শিল্পটি যেহেতু ভাষাশিল্প, তাই ভাষারূপের কথাটি বিশেষভাবে আসেই : মোস্তাফিজের গদ্যের ভাষারূপটি বিশেষ হয়ে উঠতে চায়, হয়ে ওঠেও, এবং আরও কী-যেন হয়ে-ওঠার ইশারা রেখে রেখে যায়! কথা অনেক আছে, তা বলার ক্ষেত্রও রয়েছে-এখানে সংক্ষিপ্ত হওয়াই ভাল, নইলে ক্ষীণবল পাঠক প্রভাবিত হবেন এবং বিদগ্ধরা সন্দেহ করবেন যে বুঝি বিজ্ঞাপন! না, বিজ্ঞাপন নিষ্প্রয়োজন-কেরু এন্ড কোং নিজেই এমন গুণের অধিকারী যে তার সংস্পর্শ মাতাবেই! অনুপ চণ্ডাল