সেই ছিলাে এক ১৯৭২ সাল। সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝির দিকে-একেবারে সাদাসিধে একটি প্রথম প্রেম-একদম আচকাই-জন্ম নিয়েছিলাে! শিরীন চাঁদ সুলতানা নামের এক অনাম্নী বালিকা-প্রেমে পড়েছিলাে ফরহাদ হােসেনের। সেও এক অনামা সামান্য ছেলে! অন্য অন্য বহু লােকালয়ে-এমন গল্প-কতাে কতােই তাে জন্মায়! হরদম জন্মায়! তারপর হয়তাে সেটি আকাশের দিকে মাথা উঁচোয়! বেঁচে থাকে। বা, কোনাে কোনােটি হয়তাে মাথা তুলে দেবার শক্তি পায় না! সেটি কখন আলগােছে মরে যায়-নজরে আসে না! আশেপাশের লােকসমাজের হয়তাে সেই প্রেম বিরিক্ষির দিকে খেয়াল দেবার-ফুরসতও হয় না! তবে আমাদের এই প্রথম প্রণয় বিরিক্ষি, কিছুমাত্র অনুকূল ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি! কুণ্ঠা, ভয়, লাজ, সংকোচে তাে সে নিজে নিজে পুড়ছিলােই, সেইসাথে তাকে ঝলসে দেয়ার জন্য ফুসে উঠছিলাে সংসার-সমাজের ঘৃণা ! চৈত্র মাসের বৃষ্টিহীন, খরখটা সন্ধ্যাগুলাতে, দেশের গ্রাম-গঞ্জের সায়শান্তির উনােন থেকে, হঠাৎ যেমন ঘরের চালের দিকে আগুন লাফ দিয়ে ওঠে; সেই ভয়ঙ্কর আগুনের মতাে-সামাজিক ঘৃণা- তাকে ঘিরে লকলকিয়ে উঠেছিলাে! ঘৃণা ও নিন্দার আগুনে-অই যে সেই প্রথম প্রণয়-বিষম দগ্ধ হয়! ধুকতে থাকে! ক্রমে হয়তাে সে-দিনে দিনে-আবার মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে যাবার শক্তি পেয়েই যেতাে! তবে সেই অবস্থাটা আর কোনােদিন আসে না! সেটি আসার পথ রুদ্ধ করে দেয়- সেই তারা দুজন-যাদের নাম শিরীন চাঁদ সুলতানা এবং ফরহাদ হােসেন!
ইনডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ অধ্যাপনারত আকিমুন রহমান পিএইচ ডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ; আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ, সােনার খড়কুটো, পাশে শুধু ছায়া ছিলাে, পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া এ মাছি, এইসব নিভৃত কুহক।