দুনিয়াজুড়ে একটা মিথ তৈরি করে রেখেছেন নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। আবার কারো কারো মতে হোজ্জার গল্পগুলোই আসলে মিথ। সত্যিকারের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কোনো অস্তিত্বই ছিল না। যে দিক থেকেই দেখা হোক না কেন, নাসিরুদ্দিন হোজ্জা অথবা তাঁর গল্পÑদুনিয়াতে একটা মিথ তৈরি করে রেখেছে প্রায় আটশ বছর ধরে। নাসিরুদ্দির হোজ্জা নামের মানুষটার কথাই যদি ধরি, তবে ভীষণ বোকা লোক ছিলেন তিনি। দুনিয়া জুড়ে নাসিরুদ্দিনকে নিয়ে মিথটাও জনপ্রিয়। কিন্তু সত্যটা হলো, একজন মানুষ একই সময়ে বোকা ও বুদ্ধিমানÑদুইই হতে পারে। তার নজির নাসিরউদ্দিন হোজ্জা নিজেই। নইলে যেখানে ঘরের চাবিটা হারিয়ে গেল, সেখানে না খুঁজে হোজ্জা কেন আলোতে খুঁজতে গেলেন? কেউ কেউ মনে করেন, আসলে হোজ্জা বোকার ভান ধরে থাকতেন। অন্যকে বোকা বানানোর এটাও একটা কৌশল। সন্দেহবাতিকদের ভাবনা অন্য জায়গায়, সত্যিই কি নাসিরুদ্দিন হোজ্জা নামে কেউ ছিলেন? পারস্যের এক কথক ছিলেন হোজ্জা। তাঁর বলা গল্পগুলো সবই নিজ জীবনের উপলব্ধির প্রকাশ। তাঁর গল্পের বিষয় অনেক। বৈচিত্র্যের দিক থেকেও গল্পগুলো অসাধারণ। নইলে কয়েকশ বছর ধরে দুনিয়ায় টিকে থাকে কী করে? পাকিস্তানের সুফি কমিউিনিটিতে এসব গল্প পড়ানো হয়। প্রখ্যাত সুফি প-িত ইদ্রিস শাহ তাঁর ‘দ্য সুফিস’ বইতে লিখেছেন : মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয় নাসিরুদ্দিনের গল্পগুলো দর্শনশাস্ত্রের ইতিহাসের বিষ্ময়কর কীর্তি। অজ্ঞতার কারণেই বেশিরভাগ গল্প কেবল কৌতুক হিসেবেই প্রচলিত। এসব গল্পের কথন আর পুর্নকথন হয় চায়ের দোকান থেকে কাফেলা, ঘরের ভিতর এমনকি এশিয়ার বেতারগুলোতে। কিন্তু এসব গল্পের সহজাত গুণটিই হলো একেকটা গল্পের অনেকগুলো মানে দাঁড়ায়। এই কৌতুকগুলোর রয়েছে এমন নীতিকথা, যা ব্যক্তিবিশেষে বোঝার দক্ষতার ওপর গভীর তাৎপর্যপূর্ণ চেতনার চেয়েও বেশি কিছু তৈরি করে। ভ্রমণ পিয়াসী নাসিরুদ্দিন গল্পগুলো তৈরি করেছেন বিস্তৃত এলাকা থেকে। তাঁর ঘোরাঘুরি ছিল বেইজিং থেকে বোস্টন, দিল্লি থেকে ডেলাওয়ার পর্যন্ত। যদিও তিনি কখনো আমেরিকার ডেলাওয়ারে গিয়েছেন বলে শোনা যায়নি।
হাশিম মিলন। জন্ম : ৩১ জানুয়ারী ১৯৭২, ঝিনাইদহ শিক্ষা: এম এস এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) এম বি এ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা: ১১টি মূলত: ছড়া ও কবিতায় বিচরণ নব্বই দশক থেকে লেখালেখির আঙিনায় দীপ্ত উপস্থিতি।