"তালপাতার পুথি" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া জেলেই কেটেছে দুই দশকেরও বেশি সময় । স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু কখনাে তাঁর মনে ভয় ধরাতে পারেনি! মাটি ও মানুষের প্রতি দুর্নিবার ভালােবাসা ও অঙ্গীকার তাঁকে করে তুলেছে স্বাধীনচেতা ও বজ্রকণ্ঠ। সংশপ্তক চেতনায় লড়াইয়ের মন্ত্রে দীক্ষিত এই মানুষটি মহাকালের পথ বেয়ে হয়ে উঠেছেন একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা । শুধু কি তাই? সবুজের বুকে লাল সূর্যখচিত স্বপ্নময় একটি পতাকা আর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড, ঠিকই একদিন বাস্তব করে তুলেছেন! বাংলার মানুষের প্রতি তাঁর এই সহজ-সত্য ভালােবাসা বিশ্ব যেন আজও অবাক চোখে দেখে । এমন একজন মহৎপ্রাণ মানুষকেও কতিপয় বিপথগামী দুবৃত্ত তাঁর স্বপ্নের বাস্তবের স্বদেশ থেকে নির্মম ও নৃশংসভাবে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এ যেন এক ট্র্যাজিক মহাকাব্য । কথাশিল্পী মহিবুল আলম গভীর মমত্ব দিয়ে এই ট্র্যাজিক হিরাের জীবন-আখ্যান রচনা করেছেন। যা পড়তে পড়তে একদিকে পাঠকের চোখ যেমন ঝাপসা হয়ে আসে, অন্যদিকে হৃদয়ে জ্বলে ওঠে প্রতিশােধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। ‘তালপাতার পুথি’ যেন বঙ্গবন্ধুর মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞের রক্তাক্ত দলিল। বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র । তাঁদের সমান্তরালে উঠে এসেছে আরও কিছু চরিত্র। এসব চরিত্রের সবই ঐতিহাসিক । তবে লেখকের নিজের সৃষ্ট চরিত্রও কম নয়। নূরজাহান, নাজিম, জুবায়ের চৌধুরী, লােকমান আহমেদ ও জাহিদ। এসব চরিত্র লেখকের কল্পনাপ্রসূত হলেও উপন্যাসে অভিনতুন ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করেছে। প্রকৃত অর্থে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের কাহিনি-বিস্তার । অভিনিবেশী পর্যবেক্ষণ ও কাহিনির অনুপুঙ্খ বিবরণে ‘তালপাতার পুথি’ হয়ে উঠেছে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি লেখকের গভীরতর দায়বদ্ধতার দলিল। 'তালপাতার পুথি’র পরিমার্জিত অখণ্ড সংস্করণ পাঠককেও উপন্যাসের সঙ্গে একাত্ম করে তুলবে ।