বাংলা গল্প উপন্যাসের ইতিহাস সুদীর্ঘ কালের নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে যারা শিল্প সাহিত্যের চর্চা করে চলছেন বর্তমানে তারা অধিকাংশই দেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে লিখছেন। কিন্তু সব লেখা সাহিত্য মূল্য সৃষ্টি করতে পারে না। এর জন্য চাই একনিষ্ঠতা। হৃদয় আবেগের সাথে চাই লেখার দক্ষতা। কাহন তিন এমনই একটি উপন্যাস যাতে তিন শ্রেণির মানুষ বিদ্যমান। গ্রামের, শহরের ও পড়–য়া লেখক। প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনায় মুক্তির আকুতি। যুদ্ধের দামামা, যুদ্ধক্ষেত্র। অন্যদিকে প্রাত্যহিক জীবনের টানাপোড়েনে বালাদের জীবনযুদ্ধ, তা স্বাধীনতার শিকলে বন্দি হয়ে প্রতিনিয়ত কাতরায়। এ সমাজের সবটুকু একজন বিত্তবানের হাতেই অর্পিত। তার ইচ্ছাই সব। এছাড়া রয়েছে আরও সাতটি ছোটগল্প। স্বপ্ন ভাঙা মন। প্রতিটি মানুষই স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। স্বপ্নহীন আশাহীন কোনো জীবন হতে পার না। কিন্তু যেমন স্বপ্ন দেখলে নিজেকে বদলানোর এবং পরিবারকে একটু দেওয়া যায়, এর বিপরীতে তার জীবনটাই হয়ে ওঠে কঠিন মৃত্যুমুখী, সেই করুণ বিলাপ-আর্তি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের। সেই সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে যে দালাল রাতারাতি বিত্তবান হয়ে ওঠে। এ তো নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনেরই জীবনেরই গল্প। এবং সমাজের ক্ষয়িষ্ণু ঘা, যা ক্যান্সারে রূপ নেয়। মানুষকে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। কাহন তিন উপন্যাসের সাথে গল্প রয়েছে- ত্বষি, আশ্রিতা, পৌরাঙ্গনার মুক্তি, অবচেতন মনের খেলা, স্বপ্নভাঙা মন, নাফ নদে জল নেই রক্তস্রোতে, কেন এশা ফিরে আসে বারবার, ষাটের দশকের সখিনা এখন সুরঞ্জনা। তিন কাহন উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম একটি চরিত্র মিথিলা। ‘লেখক কথায়’ লেখক জানান মিথিলা একটি বাস্তব চরিত্র। যার প্রকৃত নাম নূরজাহান। তিনি একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। এর থেকেও তার বড় পরিচয় হলো তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। নারী হয়ে মুক্তযুদ্ধ করায় তাকে হতে হয়েছে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। এমনকি বিয়েও তার হইনি এ কারণেই! উপন্যাসিক ও গল্পকার জুলি রহমান একজন নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যিক। তার লেখায় নতুন নতুন চরিত্র, নতুন নতুন গল্প পাঠককে বিমুগ্ধ করে। জুলি রহমান ঢাকা জেলার ধামরাই থানার চাপিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তিনি। এ বইটি বিদগ্ধ পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে বলে আশা রাখি।
জুলি রহমান মূলত কবি। ছেলেবেলার গান কবিতা মুড়ি-মুড়কির মতো উড়িয়ে দিতে দিতে কখন তা চলে এলো কলমের নিপুণ ডগায় তা হলফ করে বলাই মুশকিল। বস্তুত তারই দীঘল মাঠে আজো রয়েছেন তিনি কানায় কানায় পূর্ণ; সৃষ্ট কাব্যবাণী মাত্রার অভোগী প্রত্যয়ী হয়ে। তবে তিনি শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই ছিলেন মেধাবী। স্কুল কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ম্যাগাজিন, দেয়ালিকায় তার ভূমিকা মেজাজি, মেধাবী। শিক্ষা জীবন: ঢাকা পলিটেকনিক স্কুল, লালমাটিয়া কলেজ, তিতুমীর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ করেন। স্বামী তখন প্রবাসী। তবে তার কচ্ছপী চলা বিরামহীন। শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি টেনে একসময় স্বামী সংসারের মোহে সুদূর মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। কবি জুলি রহমান ধামরাই থানার চাপিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম তজিম উদ্দিন মাতা ফাতেমা খাতুনের পঞ্চম সন্তান। পেশায় শিক্ষিকা জুলি রহমান একই সময় শিক্ষকতা ও শিল্প সাহিত্যচর্চার নিষ্ঠাত্রিপর্ণ প্রভায় তিনি হয়ে ওঠেন কাব্যকথা শিল্পবোধের সরসী মুকুর। সাহিত্যের নানা শাখা প্রশাখার চর্চাবর্তে তিনি নিজেকে করে চলেছেন পরিব্যাপ্ত। যার ফলশ্রæতিতে তার সৃষ্টি সৌকর্যে রূপায়িত হয়ে চলেছে সময়ের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধসহ গান গীতিকাব্য গীতিনাট্য ও পুঁথি! বাবার পুঁথিকে ধরে রাখার জন্যই তার প্রয়াস। বিবাহ পূর্বে তিনি দীর্ঘকাল ঢাকায় বিভিন্ন সাহিত্য সভাসহ পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি। স্বামীর সঙ্গে সুদূর মধ্যপ্রাচ্যে একটানা দশ বছর সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অদম্য কাজ করেন। ধারাবাহিক উপন্যাস ‘যুদ্ধ ও নারী’, ‘বহে রক্তধারা’, ‘ব্যবধান’, ‘ফাতেমার জীবন’, ‘একজন দলিলুর রহমান’ ইত্যাদি সত্যের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হয় গল্প-কবিতা রিয়াদ ডেইলিতে। রাইটার্সসহ জাগরণ রূপসি চাঁদপুর, ইত্যাদি লিটলম্যাগেও। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সম্পাদনা করেন মধ্যপ্রাচ্যে ‘জলপ্রপাত’, ‘অনিবাস’, ‘রৌদ্দুরের’। কবির প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা সেই বিচারে প্রচুর নয়। মাত্র ২৫টি। তার উপন্যাস ও গল্প সমগ্র মুক্তির আকুতিতে অপেক্ষার ঘোলাজলে তর্পায়। কবিতা সমগ্র প্রস্তুতি পর্ব চলছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯শে প্রকাশ হচ্ছে ‘আয়নার যুদ্ধ’। এটি গীতিকাব্য। এ গ্রন্থের গীতিকাব্যগুলো সময়োপযোগী। স্বাধীনতার, বিজয়ের, বাংলা ভাষার, বৈশাখের, আমেরিকান কালচার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের থ্যাংক্সগিভিং, সিক্সফ্লাগ্স, বাংলার শ্বাশ্বত চিরায়ত প্রেমের গীতিকাব্য নিয়ে ‘আয়নার যুদ্ধ’ বই। এই বইটির নামকরণে যিনি তিনি লেখকের বন্ধু আলেয়া চৌধুরী। জুলি রহমানের আরও প্রচুর গীতিকাব্য ও গান আছে, যা সংখ্যাতিত। যা এখনো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। বর্তমানে তিনি সাজুফতা সাহিত্যক্লাবের পরিচালক এবং সাজুফতা নামে সাহিত্য-কাগজও সম্পাদনা করেন।