আট বছরের একটি ছেলে যখন জ্বরে ভুগে তার সমাজবিজ্ঞানী বাবার সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যায় চিকিৎসার জন্য, তখন এক অভিনব ঘটনা ঘটে। এর আকস্মিকতায় ছেলেটি এতটাই ঘাবড়ে যায় যে সে ভয় পেয়ে মুখ ফস্কে আরেকজনের নাম উচ্চারণ করে। সে ছিল এপার্টমেন্টেরই দারােয়ান, যে কখনাে কখনাে বিকেলে ছেলেটিকে বাসা থেকে নিচে নিয়ে যেত অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার বায়না মেটাতে। বাবার সংশয় চরমে ওঠে, কারণ গত রাতে জ্বরের ঘােরে ছেলেটি দারােয়ানের নাম উচ্চারণ করায় তিনি চমকে উঠেছিলেন। ঘটনা ভিন্ন দিকে মােড় নেয়, যখন প্রতিবেশীর ১৫ বয়সের তরুণটি এমন কিছু ব্যাপারের ইঙ্গিত দেয়। নিষিদ্ধ ভিডিও গােপনে ধারণ ও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবার হুমকি, চাঁদা দাবি করার পাশাপাশি কাউকে খুন করার নীল নকশাও অচিরেই সামনে চলে আসে। বাবা যখন সেই ডাক্তার আর দারােয়ানের বিরুদ্ধে নিজের ছেলেকে যৌন-নিপীড়নের দায়ে মামলার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার বিরুদ্ধেও যদি ১৫ বয়সের তরুণটি নিষিদ্ধ সম্পর্কের অভিযােগ তােলে, তখন কী ঘটে? বয়ঃসন্ধির ছেলেদের স্বপ্নদোষ', হস্তমৈথুন, মেয়েদের প্রতি আবেগ অনুভবের মতাে ব্যাপারগুলাে সম্পর্কে জানানাের , বােঝানাের দায়িত্ব মা-বাবা, বড় ভাই-বােন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। শরীর বিষয়ক অজস্র ট্যাবু তাদের শৃঙ্খলিত করে বলেই গােপনে সমবয়সী অসৎ সঙ্গের পাল্লায় পড়ে তারা নানাভাবে বিগড়ে যায়। লুকোচুরি আর গােপন করার মানসিকতায় কেউ কেউ রীতিমতাে ‘ধর্ষক’ হয়ে ওঠে। অবদমন থেকে নিজেকে সুরক্ষায় ব্যাপারগুলাে জেনে যুক্তিনিষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ধারণা পােষণ জরুরি। নইলে সামাজিক অবক্ষয়ের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ অসম্ভব। ঠিক এ ভাবনা থেকেই খেলা’ উপন্যাসটি লিখিত। এর আগে কেউ হয়ত এত স্পষ্টভাবে বিষয়গুলাে সম্পর্কে বলেননি। কিন্তু কাউকে না কাউকে তাে মুখ খুলতেই, বা লিখতেই হবে!
তাশরিক-ই-হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের 'ইউজিসি পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলোশীপ-২০১৮' এর মনোনীত ফেলো হিসেবে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের কথাশিল্প নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ইতঃপূর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (ত্রিশাল, ময়মনসিংহ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এমফিল ডিগ্রি ও ২০১৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ 'বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে প্রান্তজনের জীবনচিত্র' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রথম এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভের গ্রন্থরূপ হিসেবে মর্যাদায় আসীন। মৌলিক ও ভিন্নধর্মী গবেষণা হিসেবে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ 'বাংলাদেশের উপন্যাসে লোকজ উপাদানের ব্যবহার' বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানজনক 'রিসার্চ গ্র্যান্ট' পেয়েছে। তাঁর লেখা বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্য পত্রিকা', 'কলা অনুষদ পত্রিকা', 'প্রাচ্যবিদ্যা পত্রিকা', 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা'সহ 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকা', 'বাংলা একাডেমি পত্রিকা' ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ভাষা-সাহিত্যপত্র', রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্যিকী', বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (রংপুর) 'বাংলা গবেষণা সংসদ' প্রভৃতি গবেষণামূলক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির মোট ৭টি গবেষণা গ্রন্থ পুনঃসম্পাদনাও করেছেন।