“ঝড়ের আগে অথবা পরে” সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম থ্রিলার। এর পটভূমি ২০১৯ সালের রাজধানী ঢাকা। এ শহরে প্রতিদিন খুন, গুম, আত্মহত্যা, গ্যাং রেপ, পুলিশের মামলা ও আসামীকে রিমান্ডে নিয়ে ভয়ানক নির্যাতনের নানা ঘটনা ঘটে। মিডিয়াতে সেসব ঘটনা প্রকাশিতও হয়, নিজস্ব বয়ানে। মানবিক মূল্যবােধের অবক্ষয়, ব্যক্তিজীবনের গােপন অন্ধকার, সামাজিক নিষেধাজ্ঞা ও অবদমনের পরিণতিতে মানুষের মনােলােকে সৃষ্টি হয় বিকারগ্রস্ততা। পরিণতিতে তা যৌনচেতনা ও আবেগীয় বহিঃপ্রকাশের নেতিবাচকতাকে রূপায়িত করে। নর-নারীর সহজাত সম্পর্কের সমান্তরালে সমলৈঙ্গিক মানুষের নিষিদ্ধ চালচিত্রকে এর আগে বাংলাদেশের কথাশিল্পে এত অকপটে পাওয়া যায়নি। জীবন যেখানে ভাংচুর, উন্মাদনা আর প্রবল নিষ্পেষণের নামান্তর, সেখানে পেটের ক্ষুধার সমান্তরালে দেহের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করাও রক্ত-মাংসের মানুষের অন্যতম চাহিদা! স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার পরিচিত সম্পর্কের পাশাপাশি এ উপন্যাসের কুশীলবরা সমাজ-ধর্মনিষিদ্ধ সম্পর্কেও যুক্ত হয় নিছক মানবিকতার টানে, যার নাম বন্ধুত্ব। একের অসহায়ত্ব ও অস্তিত্বসংকট যখন অন্যজনকেও প্রভাবিত করে পাশে এসে দাঁড়াতে, সেই বন্ধনকে তারা পরিণতিতে উন্নীত করে দেহজ ভালােবাসা অনুসন্ধানে। এ উপন্যাসে নেই কাহিনীকে প্রথাগতভাবে বর্ণনার তাগিদ, চরিত্রের অকারণ বিস্তার আর সংলাপের আধিক্য। সমগ্র কাহিনীকে লেখক এমনভাবে বুনেছেন, যেখানে আগের ঘটনা পরে, পেছনের ঘটনা সামনে চলে আসে। এ ধরনের লেখায় পরতের পর পরত থাকে মূল ঘটনা বুঝে উঠতে। তাই অনেক কিছুই পাঠককে অনুমান করে নিতে হয়। দেহে-মনে-ভাবনায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে প্রাসঙ্গিক বিবেচিত হবে।
তাশরিক-ই-হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের 'ইউজিসি পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলোশীপ-২০১৮' এর মনোনীত ফেলো হিসেবে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের কথাশিল্প নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ইতঃপূর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (ত্রিশাল, ময়মনসিংহ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এমফিল ডিগ্রি ও ২০১৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ 'বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে প্রান্তজনের জীবনচিত্র' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রথম এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভের গ্রন্থরূপ হিসেবে মর্যাদায় আসীন। মৌলিক ও ভিন্নধর্মী গবেষণা হিসেবে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ 'বাংলাদেশের উপন্যাসে লোকজ উপাদানের ব্যবহার' বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানজনক 'রিসার্চ গ্র্যান্ট' পেয়েছে। তাঁর লেখা বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্য পত্রিকা', 'কলা অনুষদ পত্রিকা', 'প্রাচ্যবিদ্যা পত্রিকা', 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা'সহ 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকা', 'বাংলা একাডেমি পত্রিকা' ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ভাষা-সাহিত্যপত্র', রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্যিকী', বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (রংপুর) 'বাংলা গবেষণা সংসদ' প্রভৃতি গবেষণামূলক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির মোট ৭টি গবেষণা গ্রন্থ পুনঃসম্পাদনাও করেছেন।