চন্দ্র আখ্যান তাশরিক-ই-হাবিবের চতুর্থ গল্পগ্রন্থ। তিনি এগুলােকে আখ্যান হিসেবেই লিখেছেন। গল্প লেখায় তিনি সচেতন ও নিরীক্ষাপ্রিয়। কেননা, কথাশিল্পের সংবেদনশীল এ সাহিত্যরূপের প্রকরণগত কাঠামােই এমন, যেখানে বাহুল্য ও পুনরাবৃত্তি নিতান্ত পরিহার্য। তাছাড়া বিষয়বস্তুগত ভিন্নতা, শৈল্পিক গুণ ও ভাষাগত প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে গল্প মার খায়। তার গল্প অন্য কারাে মতাে নয়। তিনি সমকালীন গল্পকারদের চেয়ে ভিন্ন পথে হাঁটতেই স্বচ্ছন্দ। তাঁর মতে ‘আমার একটি গল্প যেন অন্য গল্পের পুনরাবৃত্তি হয়ে না ওঠে বিষয়, আঙ্গিক ও উপস্থাপনারীতিতে। চারটি গল্পের এ সংকলনে গল্পকার বাংলা গল্পের ঐতিহ্যবাহী ধারা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচর্যিত উত্তরাধুনিক প্রবণতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে লােকজ জীবন ও সংস্কৃতি, ইন্টারনেটনির্ভর মহানাগরিক মানব সম্পর্কের ভাঙন ও অবদমন, যৌনকাতরতার আদিম উন্মােচন ও এর নেতিবাচকতার চালচিত্র তাঁর গল্পের উপজীব্য। এক্ষেত্রে আখ্যানে বিন্যস্ত হয় উত্তরাধুনিক সাহিত্যবৈশিষ্ট্য, উল্লম্ফনধর্মিতা, পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা, চেতনাপ্রবাহ রীতি ও নাট্যগুণ। সংলাপকে তিনি প্রায় নৈঃশব্দ্যের পর্যায়ে নিয়ে যান, লেখায় ফুটিয়ে তােলেন শব্দময় ও শব্দাতীত বিচিত্র সংবেদনশীল অনুভব। তাঁর গদ্যরীতি একান্তই নিজস্ব কণ্ঠস্বরকে ধারণ করে।
তাশরিক-ই-হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের 'ইউজিসি পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলোশীপ-২০১৮' এর মনোনীত ফেলো হিসেবে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের কথাশিল্প নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ইতঃপূর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (ত্রিশাল, ময়মনসিংহ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এমফিল ডিগ্রি ও ২০১৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ 'বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে প্রান্তজনের জীবনচিত্র' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রথম এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভের গ্রন্থরূপ হিসেবে মর্যাদায় আসীন। মৌলিক ও ভিন্নধর্মী গবেষণা হিসেবে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ 'বাংলাদেশের উপন্যাসে লোকজ উপাদানের ব্যবহার' বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানজনক 'রিসার্চ গ্র্যান্ট' পেয়েছে। তাঁর লেখা বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্য পত্রিকা', 'কলা অনুষদ পত্রিকা', 'প্রাচ্যবিদ্যা পত্রিকা', 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা'সহ 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকা', 'বাংলা একাডেমি পত্রিকা' ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ভাষা-সাহিত্যপত্র', রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্যিকী', বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (রংপুর) 'বাংলা গবেষণা সংসদ' প্রভৃতি গবেষণামূলক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির মোট ৭টি গবেষণা গ্রন্থ পুনঃসম্পাদনাও করেছেন।